ক্যালিডোস্কোপে দেখি – ৮

ক্যালিডোস্কোপ-২ ।। ফটো তোলা *** *** আমার বয়স তখন এগারো-বারো বছর হবে। ভাড়া থাকি দোতলা এক বাড়ির নীচের তলাটিতে। কিন্তু আমার বিচরণ ছিল গোটা বাড়ি জুড়েই। এক মায়াবী দুপুরে, চিলেকোঠার ঘরটা থেকে হাতে এসে গেল আগফার একটি বাক্স-ক্যামেরা, আদিযুগের। তার সবচেয়ে পছন্দের বৈশিষ্ট্য ছিল – দুটি ভিউ-ফাইন্ডার। একটি ক্যামেরার পিছনের দেয়ালে, অন্যটি ক্যামেরার ছাদে। ক্যামেরাটির বহিরঙ্গের রূপে তাকে কোলে তুলে নেওয়ার মত ছিল না। কিছু অকর্মণ্যতাও ছিল হয়ত যা আমার জানা ছিল না, আমি জানতে উৎসুকও ছিলাম না। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম ওটাতে ফিল্ম ভরা যাবে কি না। যাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম তাঁদের ডাকতাম বড়কাকু, ছোটকাকু বলে। আমার প্রতি ছিল তাঁদের অপার স্নেহ। ফলে ক্যামেরাটা ছোটকাকুকে দেখানোর সাথে সাথেই সেটা আমার হয়ে গেল। ছোটকাকুর উৎসাহে চলে গেলাম ফটোর দোকানে – জীবনে প্রথমবার। তারপর আর কি – ক্লিক ক্লিক ক্লিক। একসময় পরম উত্তেজনার শেষে হাতে এল শাটার টেপার ফসলগুলি। সেই যে আমি মুগ্ধ হলাম, আমার কাজে নয়, এই শিল্পটিতে, সেই মুগ্ধতা আর কোনদিন কাটল না। মুগ্ধতার শুরু করে দিয়ে ক্যামেরাটি অবশ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল তার পরে পরেই – আমার হাতে। ঠিক কোন কারণে মনে নেই, আমার ধারণা হয়েছিল ক্যামেরাটা একবার পুরোপুরি খুলে ফেলে তারপরে আবার জুড়ে সেটাকে ঠিক করে বানিয়ে নেয়া দরকার! এরপর দীর্ঘদিনের খরা – পকেট ফুটো। আবার ক্যামেরা পেলাম কুড়ি বছরের পারে আমেরিকায় এসে। আহা সেই ২০ ডলারের তাকচাদা (তাক করো, চাবি দাবাও) ক্যামেরায় যে অপার আনন্দ পেয়েছিলাম তার পরিমাণ পরবর্ত্তীকালের যেদাতেতো (যেমন দাম, তেমন তোলো) ক্যামেরাগুলির থেকে কোন অংশে কম ছিল না। এর বছরখানেকের মাথায় পেলাম প্রথম এসএলআর, নিকন ৫, গিন্নীর কাছ থেকে, তার সাথে আমেরিকায় আসার উপহার হিসেবে – প্রতিশ্রুতিমত! পাশাপাশি ব্যবহার চলল নানারকম তাকচাদা ক্যামেরারও। একসময় সোনির সৃষ্টি হাতে নিয়ে ঢুকে পড়লাম ডিজিটাল ক্যামেরার জগতে – একটা ফ্লপিতে চারটে শট। তার পাশাপাশি এল আর এক অভিজ্ঞতা – ক্যামকর্ডারে স্ন্যাপশট। অবশেষে আর এক স্বপ্নের ক্যামেরা – নিকন ডি৩০০। ভেবেছিলাম সেই শেষ। ভুল। বছর খানেক আগে জুটেছে আই ফোন ৫। আরো কি কি আসবে কে জানে! ক্যামেরার ডিজিটাল দুনিয়ায় যাওয়ার আগেই আর-একটি ডিজিটাল দুনিয়ায় আমি ভিড়ে গিয়েছিলাম – ফটোশপিং। কত রকমের ফটো সম্পাদনার সফটঅয়্যার যে ব্যবহার করেছি – বিনা দামের, নানান দামের! একটা সময় ছিল যখন ছবি নিয়ে কারিকুরি করব বলেই ছবি তুলতাম। বন্ধুমহলে একটু কদর-ও হয়ে গেল। উৎসাহের চোটে আলো কিনলাম, নানা রংয়ের পশ্চাৎপট, কাঠামো – হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড! এমন কি আইনী নিয়ম-কানুন মোতাবেক ফোটো তোলার ব্যাবসাও চালু করে ফেললাম। কিছুকাল এক অদ্ভুত আনন্দে কেটে গেল। নিজেরা সারা বৎসর ছবি তুললেও বিশেষ মুহুর্তের, বিশেষ ঘটনার ছবি আমাকে দিয়ে তুলিয়ে রাখা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না তখন। কিন্তু চিরকালের অস্থিরমতি আমি, কতকাল আর আমার উৎসাহ থাকে! আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল মায়াকানন। স্মৃতিতে রয়ে গেল অজস্র মুহূর্ত, আর কত যে ছবি – একক, যুগল, গোটা পরিবার, গোটা দল, দঙ্গল – কম্পিউটার-এর হার্ড ড্রাইভের পরতে পরতে। ফটো তোলার এই গোলচক্করে একটা সার উপলব্ধি আমার ঘটে গেল – আমি ফটোগ্রাফার নই। ফটো তোলা আমার জন্য নয়, যেমন নয় প্রায় কোন কিছুই। কিন্তু তা বলে ছবি নিয়ে বকর বকর করব – আর একটাও ছবি জুড়ে দেব না – সেটা ত আর ভালো দেখায় না! লোকটা আমি কুঁড়ে। আর এখন ত কোন ছবি না তুলেই দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছি দিনের পর দিন। অতএব, ফ্লিকারং শরণং গচ্ছামি। নানা ফেলে আসা দিনের স্মৃতি, আমার ঘর বা ঠিক তার চারপাশে। কোন ছবিই সম্ভবতঃ সরাসরি ক্যামেরা থেকে নয়, ফোটোশপের কিছু না কিছু প্রসেসিং আছে। কমপক্ষে কেটেকুটে মাপে আনা কি বাঁকাপনা সিধে করা ইত্যাদি। আই-ফোন ৫ নিয়ে খেলা প্রতীক্ষা। আর কটা দিন, সবুজ ফিরে এল বলে। কেমিস্টের স্বপ্নে ধৈর্য্য স্টিল লাইফঃ একসাথে আমার ভ্যালেন্টাইন হতে চান! সাবধান, চোট লাগতে পারে! আয় তবে সহচরী নবীন পর্ণপুটে ক্যামকর্ডার সোনি ডিসিআর-এসএক্স৪৪ নিয়ে গল্পবলা স্টিল লাইফ সরল অভিমান নিকন ডি ৩০০ নিয়ে স্টিল লাইফঃ সার বেঁধে কি খবর? বিশেষ কিছু? ছড়িয়ে পড়ো, গড়ে তোলো শ্যামল ধরণী। সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে কবিতার কাছে [প্রকাশিত – সচলায়তন, ফেব্য়ারুরী ১১, ২০১৪]

ক্যালিডোস্কোপ-২ ।। ফটো তোলা *** *** আমার বয়স তখন এগারো-বারো বছর হবে। ভাড়া থাকি দোতলা এক বাড়ির নীচের তলাটিতে। কিন্তু আমার বিচরণ ছিল গোটা বাড়ি জুড়েই। এক মায়াবী দুপুরে, চিলেকোঠার ঘরটা থেকে হাতে এসে গেল আগফার একটি বাক্স-ক্যামেরা, আদিযুগের। তার সবচেয়ে পছন্দের বৈশিষ্ট্য ছিল – দুটি ভিউ-ফাইন্ডার। একটি ক্যামেরার পিছনের দেয়ালে, অন্যটি ক্যামেরার ছাদে। ক্যামেরাটির…