বর্ডার

আমার বাবা-মা দু’জনেই ছিল ঐ পারের মানুষ। ঐ পারের মানে, বর্ডারের ঐ পারের। যেই দেশের সাথে বর্ডার, তার নামটা উচ্চারণ করতে আমার বাবার বুকের ভিতর ধাক্কা লাগত। বাবার জন্ম সেই দেশের পানামে। সে ভারত চিনত, বাংলা চিনত, তার জন্মের দেশ। বাংলা ধরলে বাংলা, ভারত ধরলে ভারত।
বাবা বিড়বিড় করে,
– রাতারাতি বর্ডার তুইলা ঐ নামে দেশ হইয়া গেল! ঐ নামের মইধ্যে কোথাও ত বাংলার চিহ্নমাত্র আছিল না!
বাবাকে এইসব কথাবার্তায় ধরিয়ে দিলে আমার উপর তখনকার মত পড়ার চাপটা কম থাকে, আমি তাই জিজ্ঞাসা করি,
– কেন? কথা ছিলনা কেন?
বাবা বলে, যে উত্তর আমার আগেও শোনা আছে,
– পাঞ্জাব, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, আর সিন্ধু এই নামগুলার আদ্যক্ষর নিয়া তার মইধ্যে বলার সুবিধার জন্য আই বসাইয়া নিয়া শেষে বালুচিস্তান-এর স্তান জুইড়া নামখান বানাইছিল। এই প্রদেশগুলি নিয়াই হওনের কথা ছিল হেই দেশ। তার মইধ্যে বাংলা ঢোকে কেমনে? এই সব ঐ শয়তান ইংরাজগ কাম। অরা বাংলার উপর প্রতিশোধ নিল।
আমি জানি আমার প্রশ্নের কি উত্তর আসবে তবু আবার জিজ্ঞাসা করি,
– কেন?
– স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা অগো যে মাইরটা দিছিল তার বদলা নিল।
আমার মা উপস্থিত থাকলে এই সময় ঝামটা দেয়। বলে,
– হ, সকল-ই ইংরেজের দোষ। আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারুম, দোষ কুড়ালের।
বাবা এই সময় আর কথা বাড়ায় না।
আমার বাবা-মা চেষ্টা করে যেই ভূখণ্ডে আছে সেই ভূখণ্ডের মত করে তাদের ভাষাকে বদলিয়ে নিতে। মা অনেকটা সফল হয়। বাবা কিছুটা সফল হয়, অনেকটাই হয় না। তাদের ভাষায় বর্ডারের এপার ওপার দুই পার-ই ফুটে ওঠে। আমি এই পারে জন্মেছি, এই পারের ভাষায় কথা বলি। কিন্তু আমার ইচ্ছা করে ঐ পারের ভাষায় কথা বলতে। তাই আমি যখন মনে মনে কথা বলি, আমার মনের জিভের ডগায় ঐপারের আকাশ-জমিন-খাল-বিল-নদ-নদী-গয়নার নাও-হাওড়ের বাতাস ঘুরপাক খায়। এ পারের ভাষার সাথে মিলে মিশে যায়। বাবা-মার থেকে ভিন্ন অনুপাতে। তবে সবার সামনে আমি এই পারের ভাষাতেই কথা বলি।
আমরা অনেকদিন নদীর পাড়ে বাঁধের উপর হাঁটতে যাই নি। নদীতে এবার জল খুব বেড়েছে। সন্ধ্যে একটু গড়ালেই তার ডাক শোনা যায়। বাবা-মা উদ্বিগ্ন-মুখে আলোচনা করছে। আমি বীণাপিসির কোলে মুখ গুঁজে গল্প শুনছি। পিসীর বাড়ির, পিসীর দেশের, বর্ডারের ঐ পারের, যেখানে পিসীর আর কোনদিন যাওয়া হবে না। পিসী বাবার গ্রাম সম্পর্কের বোন। এই পারে আসার পর পিসীর বাবা সুবল-দাদু একদিন ঠিকানা হাতে আমাদের বাড়ি এসেছিল পিসীকে সাথে করে। এখন তারা যেখানে থাকে সেখান থেকে আমাদের বাড়িতে বাসে আসতে সকালে বের হলে বাড়ি ঢুকতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পিসী আজ দুপুরে আমাদের বাড়ি এসেছে। তিন-চারমাসে একবার করে আসে। পিসীর পাশের বাড়ির রমেশ-কাকা পিসীকে আমাদের বাড়ি রেখে যায়। কয়দিন বাদে তার কারবারের কাজ মিটলে ফেরার সময় আমাদের বাড়িতে সকাল দশটার মধ্যে দুপুরের খাওয়া খেয়ে, বেলা থাকতে থাকতে পিসীকে নিয়ে ফিরে যায়। বাবা আর আমি বাসস্টপ পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে সঙ্গে যাই।
পিসী যখন আসে, সবসময় বাড়ির গাছের ফল কি বাড়িতে বানানো গুড় কি আচার নিয়ে আসে। কোন কোন বার সাত-দশদিন থেকে যায়। আমার তখন মজাই মজা। তখন আমি ঠাকুমার কাছে না শুয়ে পিসীর কাছে শুতে চাই। ঠাকুমা সেটা অতটা চায়না। বলে,
– বীণার মাথার ছিট আছে।
মাথার ছিট কাকে বলে সেইটা আমি বুঝি না। বীণাপিসী ত বলে আমার বাবার মাথায় ছিট আছে,
– তর বাবার মাথায় যত প্ল্যান ঘোরে সেই সব মানলে এই পিথ্থিবী পালটায় যাইত গা।
বলে আর খিলখিল করে হাসে। মাও হাসে। মা পিসীকে খুব ভালোবাসে। বলে, পিসীর মনটা ভালো। তবে বীণাপিসী কোন কোনদিন কাঁদেও মনে হয়।
পিসীরা কয়েক ঘর একসাথে রাতারাতি গ্রাম ছেড়েছিল। কয়েকদিন ধরে পায়ে হেঁটে তারপর বর্ডার পার হওয়া। পিসীদের সাথে যা টাকা পয়সা ছিল সব বর্ডারে লুঠ হয়ে যায়। পরে পিসীদের ঠিক পাশের বাড়ির মৈনুদ্দিন-চাচা তার কাছে রেখে আসা পিসীদের সব গয়নাগাটি পিসীর এক জ্যাঠার হাত দিয়ে এ পারে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেই জ্যাঠারা আরো পরে এসেছিল। পিসীর এমন কপাল, জ্যাঠা একদিন বাড়ি এসে বলে তারা বর্ডার পার হওয়ার সময় সেই সব গয়নাগাঁটি আর বাড়ি বিক্রীর টাকা ভরা পোটলাটা লুঠ হয়ে গিয়েছে। তবে জ্যাঠাদের টাকাপয়সা লুঠ হয়নি। তাদের এখন অবস্থা ভালোই। পিসী বলে, মৈনুদ্দিন-চাচা পরে ঘটনা জেনে আফশোস করেছিল যে কেন সে নিজে এলো না, কিংবা কেন তার ছেলে সৈফুর হাত দিয়ে গয়নাগুলো পাঠাল না।
কত গল্প যে করে পিসী। তার ছোটবেলার খেলার সাথীদের। তার পেয়ারা গাছ, আম গাছ, হাসনুহানা। তল নাই, কূল নাই হাওড় পার হয়ে মামারবাড়ি। নদী পার হয়ে বড় হাট। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত স্কুলে পড়তে যাওয়া। এইপারে এসে আর পিসীর স্কুলে যাওয়া হয়নি। ক্লাস সিক্স পাশ হয়েই দিন কেটে গেল। কিছু গল্প আছে শুধু আমার আর পিসীর। নমিতার জন্য পিসীর খুব কষ্ট হয়। আমারও হয়। পিসীর বন্ধু নমিতা। তার বাবা ঐ পারে খুন হয়ে যায়। তার ভাই বর্ডার পার হওয়ার সময় রাস্তায় মারা যায়। সে মারা যায় এ পারে এসে। নমিতার মা কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। বাবা-মা চায় না আমি এইসব গল্প শুনি। কিভাবে তারা সব হারিয়ে এখানে এসে আবার গোড়া থেকে জীবন শুরু করেছে, রিফিউজীর জীবন, সেটা মা-বাবা-ঠাকুমা কেউ বেশী বলতে চায় না। কিন্তু বীণা পিসী আমায় চুপি চুপি তার গল্প বলে, আমি চুপি চুপি শুনি। আমি ভেবে পাই না লোকে কেন বর্ডার দেয়। কেন বর্ডার পার হতে হয়। এমন হয় না, পৃথিবীতে কোথাও কোন বর্ডার থাকবে না?
আজকে পিসীর সাথে গল্প হয়নি। আমার তাড়াতাড়ি ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। আমার ঘরে, মানে আমার আর ঠাকুমার ঘরে এসে শুয়ে পড়েছি। এ ঘরের একদিকে মা-বাবার ঘর। আর অন্য দিকের ঘরে কেউ এলে থাকে। এখন পিসী আছে। আমি মা-বাবার ঘরের দেয়াল ঘেঁষে ঘুমাই। দেয়ালের ওপাশে মা-বাবা ছোট বোনকে নিয়ে ঘুমায়। আমার কোনদিন মন খারাপ লাগলে আমি একটা আঙ্গুল দিয়ে মশারীটা দেয়ালে ছুঁয়ে বলি – মা। ওদিক থেকে আঙ্গুলটা ধরে মা চুমো খায়। আমি বুঝতে পারি। আমার মন ভালো হয়ে যায়।
যখন ঘুমাতে আসি তখন সন্ধ্যার আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। এখন হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে মাথার দিকের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি মেঘ ছেঁড়া ছেঁড়া। ভাসমান। চাঁদ কখনো দৃশ্যমান কখনো অদৃশ্য। আর প্রায় এক মাস বাদে এই রকম সময় গোল থালার মত কোজাগরী চাঁদ সারারাত আকাশে পাড়ি দেবে। সেই রাতে লক্ষ্মী আসেন ঘরে ঘরে দেখতে, কে জাগে। চাঁদের সাথে সাথে গৃহস্থকেও জেগে থাকতে হবে। লক্ষ্মীবরণে। না হলে লক্ষ্মী ঘরে ঢুকবেননা। আমাদের জেগে থাকা খুব দরকার। কিন্তু সব বছরেই ঘুমিয়ে পড়ি। এবার আমি জেগে থাকবোই। তবে সে ত আর কটা দিন পরে। আজকে আমার জেগে থাকার ইচ্ছা ছিলোনা কোন। হঠাৎ করে জানালার কোণা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো। ও পাশে, এক ধারে ঝাঁকড়া গাছটার পাতার জাফরীতে, একটা পেঁচা বসে আছে। দুধ সাদা রং তার। লক্ষ্মীপেঁচা। আমি ভালো করে চোখ কচলে তার দিকে তাকাতেই সেটা মাঝখান থেকে দুভাগ হয়ে দুদিকে একটু করে সরে গেল। তারা সাদা নয়। ধূসর। মানুষ যখন যা দেখতে চায় সেই রকম করে ভেবে নেয়। লক্ষ্মী দেখার ইচ্ছায় আমার চোখ তার বাহন দেখছিল। আসলে এসেছে ওই পাখি দুটো – ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী। গল্প বলতে। কিন্তু আজ আর আমার গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে না।
ঠাকুমা গভীর ঘুমিয়ে আছে। পাশের ঘরে মা-বাবা নিচু গলায় কথা বলছে। রাত হয়েছে বলে বালিশে কান চেপে আমি শুনতে পাচ্ছি। মা বলে,
– বীণা আইজ খুব কান্নাকাটি করল।
বাবা বলল,
– জানি।
– অর বিয়া ঠিক করছে।
– হ, সুবলকাকায় একখান চিঠি দিছে রমেশের হাত দিয়া।
– তেজবরে
– হ
আর কোন কথা শোনা গেল না। আমি ভেবে পেলাম না এতে কান্নাকাটির কি আছে! মাঝে মাঝেই পিসীর বিয়ে দেবে বলে কথা হয়। কিন্তু দেনাপাওনায় মেলে না বলে হয় না। পিসী নিজেই এসে সে সব গল্প করে। পাত্র আর মেয়ে দেখতে আসা পাত্রর বাড়ির লোকরা যে কি হতচ্ছাড়া ছিল সে নিয়ে মজা করে গল্প বলে, ঢং করে দেখায় আর ফুলে ফুলে হাসে। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে যায়। কিন্তু সে ত শুধু জল, কান্নার জল নয়। এবার তা হলে বীণাপিসী কাঁদল কেন?
পরদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে বিকেলে আর খেলতে না গিয়ে পিসীর সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। পিসী বেড়ার গায়ে লতিয়ে চলা গাছটায় একটা ফুলের উপর বসা প্রজাপতির দিকে তাকিয়ে ছিল। আমায় দেখে আমার দিকে ফিরল। পিসীর চোখ দেখে বুঝলাম পিসী ফুল দেখছিল না, প্রজাপতি দেখছিল না, বোধহয় কিছুই দেখছিল না।
– পিসী, তেজবর মানে কি তিনটে বিয়ে?
পিসী যেন ধাক্কা খেয়ে জেগে উঠল। তারপর আমায় কাছে টেনে বলল,
-হ, আগের দুই বউ মইরা গেছে তাই এইবার তিন নম্বর বউ পাইছে আমারে।
-দেনা পাওনা?
-নাই, কিচ্ছু চায় নাই। তিনটা বড় বড় পোলা-মাইয়া আছে প্রথম পক্ষের আর দুইটা ছোট ছোট পোলা-মাইয়া দ্বিতীয় পক্ষের। গরু আছে। জমি আছে। বুইড়্যার শুধু একটা মাইয়ামানুষ লাগব।
– পাত্র বুইড়্যা?
– হ।
– তাই তোমার মন খারাপ?
– ও মা মন খারাপ হইব কেন? আমার কি কম বয়স? গত মাসে চব্বিশ পূর্ণ হৈল। তেজবর ছাড়া আমারে কে বিয়া করবে? তর বাপের মত বর ত আর আমার জুটবে না। আমারে কে বিয়া বইবে শুনি?
পিসী বলে আর ফুলে ফুলে হাসে। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে যায়। আমার মুখে একটা প্রশ্ন এসে গিয়েছিল। কিন্তু পিসীর রকম দেখে ভরসা পেলাম না।
মা বোনকে নিয়ে পাশের সহদেবদাদের বাড়ি গিয়েছিল। এখন ফিরল। বোন মার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে এসে পিসীর কোলে চেপে বসল।
– পিসী তুমি কাঁদছ?
– হ ত, ভীষণ।
– কেন?
– এই তোমাদের সাথে আর দেখা হইব না, তাই।
– ও মা এই ভর সন্ধ্যেবেলায় এইসব কি অলুক্ষুণে কথা বলিস তুই বীণা?
মা বকা দিল পিসীকে।
– ভুল বলি নাই বৌদি, মিলাইয়া নিও তুমি। আগের দুইটা বৌ মরছে। আমিও –
পিসী কথা শেষ করে না। মা দুই থামের মাঝখানে টাঙ্গানো দড়ি থেকে গামছা পাড়ছিল। থেমে যায়। গামছাটা আস্তে করে টেনে কাঁধের উপর ফেলে পিসীর কাছে এগিয়ে যায়। একটা কোনা দিয়ে পিসীর চোখ মুছিয়ে হাত ধরে ঠাকুরঘরের দিকে এগিয়ে যায়। আমি বোনের হাত ধরে কলতলার দিকে পা বাড়াই। সন্ধ্যে নেমে এসেছে ভালো মতন।
পরদিন রবিবারে পিসী চলে গেল রমেশকাকার সাথে।
বিকেলবেলা মা আর বাবা যখন চা-বিস্কুট নিয়ে বসেছে আমি মার কোলের কাছে এগিয়ে গেলাম। মা ডিশে একটু চা ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিল। এইটা আমার খুব প্রিয়। কিন্তু আজকে আমার এতে মন নেই। কাল বিকেল থেকে চেপে রাখা প্রশ্নটা এইবার দুম করে আমার মুখ থেকে বের হয়ে এল।
– মা বীণা পিসী সৈফুচাচাকে বিয়ে করে না কেন?
মার হাত থেকে চা চলকে গেল। মা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করল
– এইসব কি কথা? বীণা কিছু বলেছে তোমায়?
আমি মাথা নাড়লাম।
– তবে?
বীণা পিসী যে গল্পবইটা এনেছে বাসে পড়তে পড়তে যাবে বলে, সেইটার মধ্যে একটা খামে একটা শুকনো পাতা আছে।
– কি হল তাতে?
– ঐটা দেশ ছাড়ার আগে সৈফুদ্দিন চাচা বীণা পিসীকে দিয়েছিল।
মা চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
– সেইটা হইব না। ওদের ধর্ম আলাদা।
– ধর্ম আলাদা হলে বিয়ে হয়না?
– সহজে হয় না।
এই সময় বাবা বলল,
– এই ভিন্ন ধর্মে বিয়া হওয়াটা যদি অনেক হইত, তা হইলে আর দেশভাগটা হইত না। তা হইলে আর বর্ডার টানতে লাগত না।
মা আমায় কিছু বলতে যাচ্ছিল। বাবার কথায় থেমে গিয়ে বলল,
– তাইতেও কিছু লাভ হইত না।
– কেন, হইতনা কেন?
– মানুষ বর্ডার ভালোবাসে। মনের ভিতর বর্ডার টানতেই থাকে।
আমার ভিতরে রাগ উথলে ওঠে। সে কি বীণা পিসীর দুঃখে না আমার বাবা-মার, বুঝতে পারি না। তীব্র অস্বীকারে আমি চাপা গরগর করে উঠি,
– আমি বর্ডার ভাইঙ্গা দিমু।
মা আমার কাঁধ ধরে আমায় বুকের মধ্যে টেনে নেয়। আমার মুখ উঁচু করে ধরে আমায় চুমু খায়। আমার কপালে ক’ফোঁটা গরম জল পরে। প্রায় অস্ফুটে মা বলে,
– দিও তুমি।
[প্রথম প্রকাশ – বইয়ের হাট, অগাস্ট ১৫, ২০২০, দ্বিতীয় প্রকাশ – গুরুচণ্ডা৯, অগাস্ট ১৬, ২০২০]
আমার বাবা-মা দু’জনেই ছিল ঐ পারের মানুষ। ঐ পারের মানে, বর্ডারের ঐ পারের। যেই দেশের সাথে বর্ডার, তার নামটা উচ্চারণ করতে আমার বাবার বুকের ভিতর ধাক্কা লাগত। বাবার জন্ম সেই দেশের পানামে। সে ভারত চিনত, বাংলা চিনত, তার জন্মের দেশ। বাংলা ধরলে বাংলা, ভারত ধরলে ভারত। বাবা বিড়বিড় করে, – রাতারাতি বর্ডার তুইলা ঐ নামে…
Recent Posts
Categories
- Blog
- Book Chapter
- featured
- অঞ্জলি
- অনুবাদ
- অনূদিত কবিতা
- অনূদিত গল্প
- আলাস্কা গ্লেসিয়ার বে
- ঈশপের গল্প
- কবিতা
- কিছুমিছু
- ক্যালিডোস্কোপ
- ক্রুজ
- গল্পপাঠ
- গুরুচন্ডালি
- ছোট গল্প
- টুকিটাকি
- দুকূল
- নীতিকথার অনুবাদ
- পাঠ প্রতিক্রিয়া
- ফটোগ্রাফি
- বইয়ের হাট
- বাছাই
- বেড়ানোর গল্প
- মৌলিক কবিতা
- রুট ৬৬ গ্রুপ পোস্ট
- রুট ৬৬ শারদীয়া ২০২০
- সচলায়তন
- স্মৃতিকথা