পরিচিতি

টুকিটাকি কথা

কবে থেকে কিংবা কখন কি ভাবে একলহমার এই যাত্রা শুরু হল, তার একটা নির্দিষ্ট দিনক্ষণ আছে বৈকি।

“রবি, ২৮/০৭/২০১৩ – ৫:৪২পূর্বাহ্ন”

বাংলা লেখালেখির অনলাইন লেখক সমাবেশ সচলায়তনে ‘একলহমা’ এই নিক তথা ছদ্মনামে আমার প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হল।

তার আগে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ছাপা-পত্রিকা দুকূল-এর কয়েকটি সংখ্যায় চারখানি কবিতা বের হয়েছে। আর আমাদের স্থানীয় শারদ প্রকাশনী আগমনী-তে মাঝে মাঝে একটি দুটি লেখা। এ ছাড়া ফ্লিকারে বন্ধুদের ছবির মন্তব্যে মুগ্ধতা জানানো। মন্তব্যগুলি সৃষ্টির সময় লেখাগুলিকে কবিতা বা কবিতার মত কিছু বলে ভেবেছি। তাই এদের আমি ছবিতা বলি।

আমার স্ত্রী পম্পা সবসময় চেয়েছে আমি আমার লেখাগুলো একজায়গায় গুছিয়ে আনি। আমার বন্ধুদের থেকে বিভিন্ন সময় উৎসাহ পেয়েছি লেখাগুলি বই করে প্রকাশ করার। বিভিন্ন সময় ভাবনাচিন্তা করলেও বই প্রকাশ আর হয়ে ওঠেনি। তবে ছবিতাগুলি একসময় এক জায়গায় গুছিয়ে এনেছিলাম। তারপর এক সময় সাইটটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন আবার সেগুলিকে এক করে এইখানে নিয়ে এলাম।

অনেকবছর আগে ওয়েবজিন মাধুকরীতেও লিখেছিলাম। এই। নিয়মিত লেখালেখি শুরু সচলায়তনে পাওয়া প্রিয় মানুষদের আগ্রহে, উৎসাহে। প্রথম প্রথম বিভিন্ন জনের লেখায় মন্তব্য করে বেড়াতাম। সম্ভবতঃ মন্তব্যের ছড়াছড়িতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আয়নামতি-দিদি তাড়া লাগালেন পাড়ে দাঁড়িয়ে হৈ হৈ না করে সরাসরি জলে নেমে পড়তে।

নেমে পড়লাম। নড়বড়ে লেখা। কিন্তু সচলের নবীন-প্রবীণ অনেকেই নূতন সাঁতারুকে ঘিরে সাঁতরে চললেন তাকে উৎসাহ দিতে দিতে। কয়েক বছর সচলায়তনে একটানা লিখে গিয়েছি তখন। আসলে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সেই উত্তাল দিনগুলোয় আমার ভিতরে আশৈশব লালন করা এক ভালোবাসায় জোয়ার জেগেছিল। বাংলাদেশ। সে আমার জন্মভূমি নয়। সে আমার মা-বাবা আর তাদের পূর্বপুরুষদের জন্মভূমি। সেখান থেকে উৎখাত হয়ে গিয়েছিলেন তারা – রাজনীতির ষড়যন্ত্রে। আমার সেই গহীন শৈশবে তারা আমার মননে তাদের প্রিয় জন্মভূমির ছবি এঁকে দিয়েছিলেন। আমার স্বপ্নের দেশ, আজও স্বপ্নেই থেকে গিয়েছে। সচলায়তনে লেখালেখি সেই স্বপ্নকে ছোঁয়ার একটা চেষ্টা।

সেই চেষ্টা করতে থাকার সময়ে আয়নামতি দিদি আমায় পড়ালো একটা আশ্চর্য কবিতা – ক্যালিডোস্কোপ। কবি – ইন্দিরা দাশ। কবিতার ধরতাই – “চলো ক্যালিডোস্কোপ‘টা ভরে জীবনটা দেখে নিই একবার।” শুরু হল আমার ফেলে আসা জীবনটাকে ক্যালিডোস্কোপে দেখা। আমার সেই দেখার সঙ্গী হতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

সচলায়তনেই প্রাপ্তি হয়েছিল আমার নবীনতম পাঠকের। তখনও নিজে পড়তে পারে না সে। তার বাবা পড়ে শোনাত তাকে, আমার করা – ইশপের গল্পের অনুবাদ। কখনো ছাপা হয়ে বার হলে সেই বইয়ের জন্য প্রচ্ছদ এঁকে সে বাবাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল আমায়।

সচলায়তনে প্রবল উৎসাহদাতাদের আগ্রহে অনেক ছোটবেলায় পড়া একটি প্রিয় গল্প বিদায় গুলসারির রিভিউ লিখেছিলাম। পরে গল্পটি যে বইয়ে ছিল, তার তিনটি গল্পকে একসাথে করে পুরো বইটির-ই একটি রিভিউ লিখি গল্পপাঠে।

সুখের পাশাপাশি বেদনাও এসেছে। গণজাগরণে অংশ নেওয়া লেখকদের একটি বড় অংশকে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। তাদের প্রতি তাদের চারপাশের বিরূপতা আর নির্বিকার অবহেলা আমায় বড় রকম ধাক্কা দেয়। আরো নানা কারণে আস্তে আস্তে আমার লেখালেখি প্রায় শূন্যতায় চলে এসেছে।

জাম্পকাট করে চলে আসি ২০২০-তে। কোভিড-১৯ অতিমারীর আবহে বাধ্য হয়েছি প্রায় ঘর-বন্দীত্বে। আতঙ্ক চারিদিক ছেয়ে আছে। ই-মেইলে বার্তা এল। পাঠিয়েছেন আয়নামতিদিদি মানে নাহার তৃণা। তিনি এতদিনে ব্যস্ত লোক। প্রবল ভাবে হাজির বাংলা লেখালেখির দুনিয়ায় বিভিন্ন প্রকাশনায়। বিশেষ করে গল্পপাঠে। আবার সে আমায় দিল টান।

অন্য দিকে গুরুচণ্ডা৯র ওয়েবপাতায় ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে দেখি সচলায়তনের বন্ধুরা অনেকেই সেখানে আসর আলো করে আছেন। তাদের উৎসাহে জুড়ে গেছি সেখানেও। শুরু করেছি লেখালেখি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছি অনুবাদ কবিতায়

গুরুচণ্ডা৯তে নূতন প্রাপ্তি হল ঈপ্সিতা-দিদিকে। নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে লিখিয়ে নিলেন বহুদিন ধরে ভেবে রাখা আমার এক স্বপ্নকে – আগাথা ক্রিস্টির হার্লে কুইন অবলম্বনে বর্তমান বাংলার ক্যানভাসে একটি বড় গল্প (ঈপ্সিতার বলেছেন নভেলা)। পড়তে হলে ক্লিক করুন এখানে

নাহার তৃণার ডাকে গল্পপাঠে যোগ দেওয়ার ফলে পরিচয় হল সচলের আরেক প্রিয় লেখক কুলদা রায়ের সাথে। তৃণা আর কুলদা মিলে আমায় দিয়ে প্রতি সংখ্যাতেই একটি করে অনুবাদ করিয়ে চলেছেন। দেখা যাক, কতদিন ওনাদের উৎসাহ থাকে আর কতদিন আমার।

তৃণার ডাকেই যোগ দিয়েছি বইয়ের হাট-এ। লিখেছি আমার প্রথম বুক-রিভিউ। পরে দেশভাগ নিয়ে দময়ন্তীর একটি বইয়ের রিভিউ লিখেছি।

এদিকে দুকূল-এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রিয় বন্ধু শর্বরী-র কাছ থেকে খোঁজ পেয়ে শ্রাবণী লিখিয়ে নিল – পায়ে পায়ে। রুট৬৬-র শারদ সংখ্যার জন্য।

শ্রাবণীর দিদি নন্দিনীও লেখা নিয়েছে। শারদসংখ্যা অঞ্জলিতে।

হাজির হয়েছি ফেসবুকে, সেখানেও বন্ধুদের উৎসাহ-আহ্লাদ মাঝে মাঝে লেখায় ইচ্ছে যোগায়। তবে, আসলে আমি প্রবল কুঁড়ে তাই সকলের উৎসাহের তুলনায় আমার লেখা নিতান্তই অল্প।

আলোকচিত্র। নীতাফোটো নাম নিয়ে ফ্লিকারে একসময় ভালোই আড্ডাবাজি করেছি। পরে সেখানে আরও একবার আড্ডা দিই একলহমা নামে। সেই সব ছবি ও কিছু রাখবার ইচ্ছে আছে। হয়ত বা কিছু ভিডিও।

আর, আমার কিছু পাঠ, প্রাথমিকভাবে আমার বেঁচে থাকার দায়িত্ব যার হাতে তার একসময়ের উৎসাহে। দ্বিতীয়ত, বাংলা বোঝেন কিন্তু পড়তে পারেন না, এমন মানুষদের অর্থাৎ পরবর্ত্তী প্রজন্মদের ছুঁতে পারার ইচ্ছায়।

এই, এইভাবেই চলছে একলহমার টুকিটাকি।

 

অমিতাভ চক্রবর্ত্তী