গ্লেসিয়ার বে – পর্ব-১

ক্রুজ-এর স্বপ্ন তথা শুরুর শুরু

কতবার যে দুজনে গল্প করেছি একবার জাহাজে চেপে ঘুরতে যেতে হবে। কোথায় যাবো জানিনা, কিন্তু যেতে হবে। গিন্নী বলে চার রাত-এর ট্রিপ নিলেই যথেষ্ট। আমি বলি পাঁচ রাতের কমে যাওয়া নেই। আন্তর্জাল-এ রকমারী ক্রুজ-লাইন-এর বিজ্ঞাপন, কত যে ‘ডিল’ আসে-যায়। কিছুতেই আর কোন ‘ডিল’ ধরা হয়ে ওঠে না। হঠাৎ করেই হয়ে গেল সেই স্বপ্নপূরণ। ঘুরে এলাম নরওয়েজিয়ান পার্ল-এ চেপে। সাত রাত-এর লম্বা সফর।

হঠাৎ

গিন্নী আর আমি একই ল্যাব-এ কাজ করি। কয়েকদিন আগে হঠাৎ পাশে এসে বলল – আলাস্কা যাবে?
কবে?
আর দশ দিন বাদে।
অ্যাঁ!
ভাল ডিল আছে।
চলো। কিন্তু কাজের চাপ যে বড্ড বেশী এখন!
দুজনে মিলে গেলাম বস-এর কাছে। বস-এর বিশেষ আপত্তি নেই। কিন্তু একটুক্ষণেই বোঝা গেল, এত তাড়াতাড়ি ছুটি নেওয়া বাস্তবিক-ই সম্ভব হবে না। তবে, দু’সপ্তাহ বাদে যাওয়া যেতে পারে। গিন্নীর মন খারাপ হয়ে গেল – সেই সময়ের জন্য কোন ‘ডিল’ সে দেখে নি। উৎসাহ দিলাম খোঁজ চালু রাখার জন্য। সে গম্ভীর ভাবে জানিয়ে দিল এখন তার আর কোন খোঁজাখুঁজি করার মন নেই।

দিনগুলো ঢুকে গেল একটা নিম্নচাপের আবহাওয়ায়। দিন কয়েক বাদে এক সকালে দেখি গিন্নী, বস, তার বস সবাই মিলে আলোচনা করছে – বেড়াতে না যাওয়ার জন্য আসল দায়ী আমি! বাঙালের মাথা গরম হয়ে গেল। সেদিন-ই ডিল বার করে ফেললাম। যে ডিল গিন্নী দেখেছিল প্রায় সেটি-ই। এমনিতে সে মানুষ বাড়ি ফেরার পর কম্পিউটার-এর সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দ্যায়। কিন্তু আজ অন্য গল্প। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অত্যন্ত কম। এই বছরের মত এই যাত্রাপথে এই শেষ ক্রুজ। টিকিট পাওয়া যাচ্ছে প্রায় অর্ধেক দামে। রাজী না হয়ে উপায় কি! ব্যাস, শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি। ক্রমে ক্রমে কাটা হল জাহাজের টিকিট, বিমানের টিকিট, জাহাজ থেকে কুট্টি জাহাজে তিমি দেখতে বেড়াতে যাওয়ার টিকিট ইত্যাদি।

শনিবারে বিমানে চেপে যাব আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমের বন্দর-শহর সিয়াট্ল-এ। সেখান-কার কোন এক জেটি থেকে নরওয়েজিয়ান পার্ল-এর জাহাজ ছাড়বে রবিবার সকাল-এ। ১৪ তলা জাহাজ। যাত্রী-ধারণ ক্ষমতা ২০০০+, নাবিক ইত্যাদি ১০০০+ । যাবে সে আলাস্কা। Glacier Bay দেখতে। যাত্রা পথে জাহাজ থামবে আলাস্কার রাজধানী জুনো-তে। সেখানে ডাঙ্গায় নেমে আমরা একটা কুট্টি-জাহাজ নিয়ে সমুদ্রের এক বিশেষ অংশে গিয়ে তিমি দেখব। তারপর ফিরে আসব পার্ল-এ। এরপর আমাদের জাহাজ গিয়ে ঢুকবে Glacier Bay-তে। সেখানে আমরা সামনাসামনি দেখব সেই অপার সৌন্দর্য্য – হিমবাহ, glacier। তারপর জাহাজ ফিরে আসবে। কিন্তু আমেরিকায় আসবে না। ঢুকে যাবে কানাডায়। থামবে গিয়ে ভ্যাঙ্কুভার-এ। সেখানে একরাত কাটিয়ে পরের দিন আমরা শহর বেড়াব। তারপর বিকাল থেকে সারা রাত ধরে বিমান বদলাতে বদলাতে ভোরবেলায় ফিরে আসব নিজ শহরে।

যাত্রা শুরু

এসে গেল শনিবার। সূর্য্য ওঠার আগে যাত্রা শুরু হল। এক বার বিমান বদল করে যথাসময়ে পৌঁছলাম সিয়াট্ল-এর আকাশে। জানালা দিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখি মেঘের সমুদ্র ফুঁড়ে এক পাহাড় মাথা তুলে আছে। মেঘের চাদর, থোকা থোকা তুলোর সমুদ্র আর স্তম্ভ দেখেছি অনেক। কিন্তু মেঘ ফুঁড়ে পাহাড়ের এই দৃশ্য আগের কোন বিমান ভ্রমণ-এ নজরে পড়েনি। বন্ধ করে রাখা আইফোন গিন্নীর আব্দারে খুলতেই হোল। বিমানে তখন শোনান হচ্ছে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র বন্ধ করার ফরমান। প্রবল দ্রুততায় ক্ষিপ্র আঙুলের টিপে উঠে গেল ছবি।

আগে জানা ছিল দিনটা বৃষ্টি-ভেজা হবে। বদলে চারিদিক হাসছে! হোটেল-এ ঘর নেওয়ার সময় জানলাম আমাদের বুকিং বিশেষ প্রোমোশন-এ আপগ্রেড করা হয়েছে! এক-টা ঘর-এর বদলে দু’-ঘরের সুইট! মজা-ই মজা! মনের আনন্দে টিভি চালিয়ে দিলাম – দেখাচ্ছে ‘লে মিজোরাব্ল’! বসে গেলাম সাথে, সাথে।
গিন্নী সহ্য করল খানিকটা সময়। তারপর ম্রিয়মাণ হয়ে জিজ্ঞেস করল – “আনন্দের বেড়ানোতে এসে এখন এই দুঃখের সিনেমা দেখে দেখে সময় কাটাতে হবে? শহর-টা দেখব না?”
কথা ঠিক। নিজের অবস্থা মিজেরাব্ল হতে দেওয়া যায় না। বেড়িয়ে পড়লাম আমরা। শহর দেখে এলাম ট্রেন আর মনোরেল-এ। ফেরার পথে প্রিয় দোকান স্-ব্যারোর পিৎসা খাওয়া হল মাংসের গোল্লা সহযোগে।
শুয়ে পড়ার আগে অনেকদিনের জন্য শেষবারের মত সচলায়তনে ঘোরাঘুরি।
ঘুম। পরের দিন জাহাজ ছাড়বে।

জাহাজে চড়া

হোটেল থেকে আমাদের জনা দশেক-কে মালপত্র সহ তুলে নিল এক ভাড়া গাড়ি। মাথা-পিছু ১২ ডলার। গিন্নীর জায়গা হল পিছনের আসনে মহিলাদের মাঝে। আমি ড্রাইভারের পাশের সীটে। আমরা ছাড়া বাকীরা একটা দল। যাবে অন্য কোথাও। তাদের হা-হা-হি-হি-চেঁচামেচিতে গিন্নীর অবস্থা কাহিল। আমার অবস্থা অবশ্য উল্টো। গল্প চলল ড্রাইভার-এর সাথে। জেটির কাছে এসে রাস্তা প্রায় দুতলা নেমে গেছে। ড্রাইভার-আমি দুজনেই একমত হলাম যে এখানটা সান-ফ্রান্সিস্কোর মত দেখাচ্ছে। এসে গেল জেটি – পীয়ার ৬৬। আমাদের দু’জনকে নামিয়ে দিল সেখানে। আমার স্বভাব অনুসারে চারটে ব্যাগ পত্তরের মধ্যে সবচেয়ে দামী জিনিসগুলো – টিকিট, কম্পিউটার, ক্যামেরা, ভিডিওক্যামেরা এইসব যেটায় আছে সেটাই না নামিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। শেষ মুহুর্তে মনে পড়ায় দৌড়ে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে উদ্ধার করলাম। গিন্নীর যে তাকানোটা এড়াতে চাই, এড়ানো গেল না।

বিপুল বিশাল জাহাজ। চমৎকার সুশৃঙ্খল ভাবে ‘চেক ইন’ করে অগুণতি লোক জাহাজে উঠলাম। কিছু কিছু ঘর তখনো ঘর সাজানো হচ্ছে। অতএব, অভ্যর্থনাকারীরা দেখিয়ে দিলেন – চলো সবে দলে দলে প্রাতরাশ খাব বলে। গার্ডেন কাফে। ১২ তলায়। এই কাফেটা এই তলার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে আছে বলে মনে হয়। আমরা দুই বুড়োবুড়ি বেশী ঘোরাঘুরির লোক না। ঢুকেই জানালার ধার ঘেঁষে ছোট্ট টেবল ঘিরে মুখোমুখি দুই সীটে সমাসীন হলাম। ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত এই-ই ঠিকানা। বসার প্রায় সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। তার আগেই আইফোনে ছবি উঠে গেছে, জাহাজ থেকে সিয়াট্ল-এর। এবার ছবি জলের ফোঁটা বুকে ধরা কাঁচের মধ্য দিয়ে।

কাঁচের দেয়াল-অলা লম্বা ঘেরা ডেক-জোড়া কাফের মধ্যে সারি সারি বসার জায়গা, নানান মাপের, নানান ছন্দের। ডেকের শেষ মাথায় আবার খানিকটা জায়গায় খোলা আকাশের নীচে আর খানিকটা জায়গায় ক্যানভাসের চওড়া চাঁদোয়ার নীচে প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তায় বসার ব্যবস্থা। কাফে জুড়ে ঝকঝকে কাউন্টার একটার পর একটা। ঝকঝকে তরুণ তরুণীরা। কাউন্টারের ওপাশে, এপাশে। কেউ ঘরে ঢোকার মুখে স্বাগত জানাচ্ছে অতিথিদের বাড়ানো অঞ্জলিতে বীজানু নাশক দ্রবণ ঢেলে, কেউ হাসি দিয়ে, কেউ টেবল পরিস্কার করে, কেউ বয়স্কদের ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে।

গার্ডেন কাফে। গার্ডেন-এর একটা আভাষ আছে বটে কিন্তু কে সেদিকে নজর করে! নজর শুধু খাবারের সমাহারে। ওরে দিদি রে, ওরে দাদা রে, এই না হলে জাহাজের কাফে! ঘন্টা দুয়েক ধরে আমরা খেয়ে চললাম রকমারী সুস্বাদু খাবার – জানা এবং অজানা। এর মাঝে এক সময় বৃষ্টি থেমে গেল। তখন খোলা ডেক থেকে নিয়ে নিলাম সমুদ্রতীরের ছবি। ঘুরতে ঘুরতে দেখি ঐ তলাতেই আর একটা কাফে, অন্য ঢং-এ সাজানো। সেখানে খেতে গেলে অবশ্য আলাদা করে দাম দিতে হবে। তখনো খাবারের আয়োজন শুরু হয়নি। সেই অবসর-এ কুট কুট করে কটা ছবি তুলে নিলাম খাবার ঘর-এর সাজ-সজ্জার।

ঘর আর বারান্দা

একসময় মনে হল – যথেষ্ট হয়েছে। এবার ঘরে যেতেই হবে। প্রথমে আমি একাই গিয়ে দেখে আসার সিদ্ধান্ত হল। চলে এলাম ৯ তলায় আমাদের ঘরের সামনে। দরজার পাশের নির্দেশক-এ লেখা আছে ‘ওয়েলকাম’। তবে তো ঘর প্রস্তুত। ঢুকে পড়লাম। চমৎকার সাজানো ঘর। সামনে, দরজার উল্টোদিকের দেয়াল পুরোটা হাল্কা নীলের কাজ করা পর্দায় ঢাকা। পর্দা সরিয়ে দিতেই মেঝে থেকে ছাদ, এ পাশ থেকে ও পাশ জোড়া কাঁচের দেয়াল, দেয়ালের প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে কাঁচের দরজা। দরজা সরিয়ে ওপাশে অর্ধেক-এর কাছাকাছি উচ্চতা পর্যন্ত কাঁচের বেড়া দেয়া নিজস্ব খোলা বারান্দা! কাফে থেকে গিন্নীকে নিয়ে এলাম। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম দুজনে। আঃ! আর কি চাই!

[দুদিন বাদে এই লেখা যখন লিখছি, ঘরের মধ্যে কাঁচের দেয়াল-এর পাশে সোফায় বসে, দেখতে পাচ্ছি, জলের উপর লম্বা সাদা ডানা ছড়িয়ে দিয়ে এক সমুদ্র চিল জাহাজের পাশে পাশে পাল্লা দিয়ে উড়ে চলেছে। এদিকে ঘরে টিভিতে চলছে আগের রাতের এক শো-তে হওয়া দুরন্ত কন্ঠের come, fly with me! একসময় জাহাজ উড়ন্ত চিলকে ফেলে এগিয়ে গেল। আমিও প্রকৃতি দেখা ছেড়ে লেখায় ফিরলাম]

উৎসব

একসময় পূর্বনির্ধারিত নির্ঘন্ট মত সবাই জড়ো হলাম গার্ডেন কাফের বাইরে ডেক-এর অপর অংশে। সেখানে খোলা আকাশের নীচে গরম জলের একগুচ্ছ গোল গোল পাত্রে গরম বাষ্প সহযোগে বিশ্রাম-সংপৃক্ত জলকেলি করার জায়গা। পাশে একদিকে রয়েছে খেলাচ্ছলে উপর থেকে গড়িয়ে জলে এসে পড়ার ব্যবস্থা। আর-একদিকে চৌকো জলাধার – সাঁতার কাটার জন্য। আবার সেই খোলা আকাশের নীচের গোটা জলের জায়গাটা ঘিরে ছাদ-ঢাকা এলাকায় বসে-দাঁড়িয়ে আড্ডা মারার বিশাল আয়োজন। সমস্ত জায়গাটার মাঝখানে পর্যাপ্ত আলো আর শব্দ-র বন্যা বইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন এক সুদৃশ্য গ্যাজিবো।

আমরা যখন হাজির হলাম, সেখানে তখন পুরোদমে উৎসব চলছে। কোথাও কোন টেবল ফাঁকা নেই। খোলা জায়গায় চলছে তুমুল গান-বাজনা। গায়ক এবং বাদকরা জায়গা নিয়েছেন গ্যাজিবোতে, সামনে জড়ো হচ্ছেন জাহাজের নৃত্যশিল্পীদের দল। ছাদ-ঢাকা এলাকায় খাবার গ্রীল হচ্ছে। রং-বেরং-এর ককটেল সাজিয়ে সুরা-বেচা বালক-বালিকারা ঘুরে ঘুরে নীচুস্বরে উপস্থিতির জানান দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য-র দাম জাহাজ-ভ্রমনের দাম-এর মধ্যে ধরা আছে। কিন্তু সুরা কি কোক পান করতে চাইলে আলাদা করে কিনতে হবে, যখন যেমন পেতে চাই। ঘেরা এলাকার চার কোণার এক কোনায় তিনটি টেবল টেনিসের টেবল। ঘুরতে ঘুরতে আমরা যখন সেখানে গিয়ে হাজির হলাম বিভিন্ন বয়সের তিন যুগল মেতে গেছে টেবল টেনিস খেলায়। তাদের পাশেই এক সুবেশ রূপবান তরুণ বসে ছিলেন একটা গোল টেবিল ঘিরে থাকা চার চেয়ারের এক চেয়ারে। তার অনুমতি নিয়ে বাকি দুটি চেয়ারে আমরা দুজন অধিষ্ঠান হলাম। হঠাৎ এল উৎপাত। আগে খেয়াল করিনি, আমাদের টেবল-এ রাখা ছিল একটি ছাইদানী। ব্যাস, এক ধূমপিয়াসী মহা উৎসাহে ধোঁয়া উপভোগে মেতে উঠলেন। আমরা জেরবার। আমাদের অবস্থা দেখে সেই তরুণ এক ফাঁকে ছাইদানী-টা খোলা ছাদের নীচে এক টেবল-এ রেখে এলেন। ধূমপায়ী মানুষটি ভদ্রলোক নিঃসন্দেহে। ছাইদানীর সাথে সাথে তিনিও সরে গেলেন।

এক সময় কঠিন পানীয় কেনা গেল। একটু পরেই শুরু হল উজ্বল সাদা শর্টস আর টি-শার্ট পরা আবেদনময় বালক ও আবেদনময়ী বালিকাদের (বিশেষণ-এর ধরণের জন্য সচল-এর ভ্রমণ-সম্রাট তারেক অণুর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার) মন-মাতানো নাচ। আমাদের টেবিল-এর তরুন ইতিমধ্যে কোথায় চলে গিয়েছেন। দুটি নাচের পর দর্শকরাও কেউ কেউ নাচিয়েদের সাথে যোগ দিতে শুরু করেছেন। হঠাৎ দেখি একেবারে সামনের সারির সুন্দরী নাচিয়ে বালিকাদের একজন নাচের এলাকার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের পরিচিত তরুণটিকে নাচের আসরে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। ধরণে বোঝা গেল উভয়ে আহ্লাদের সম্পর্কে জুড়ে আছেন। নৃত্য-বালিকার টানাটানিতে বাধ্য হয়ে, তাঁর মানুষটি একসময় পা মেলালেন। কিন্তু তিনি নাচে স্বচ্ছন্দ নন, তাই তাড়াতাড়ি-ই সেখান থেকে সরে এলেন। সুন্দরী তখন ভারী মনোরম ভঙ্গীতে জিভ ভেংচিয়ে তাঁকে বিদায় জানালেন। নাচের মাঝেই জাহাজ ঘুরতে শুরু করেছিল, এখন সে সামনে এগিয়ে চলল। জাহাজী নাচিয়েরা কখন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। উৎসাহী যাত্রীরাই তাঁদের জায়গায় নেচে চলেছেন। এদিকে, ছাইদানী না থাকা সত্বেও এক নিষ্ঠুর তরুণী আমাদের কাছাকাছি এসে গাঁকগাঁক করে ধোঁয়া টানতে আর ছাড়তে লাগলেন। আমরা উঠে পড়তে বাধ্য হলাম। ফিরে চললাম আমাদের ঘরে। মনের অ্যালবামে তোলা থাকল নৃত্য-বালিকার সেই অপূর্ব মুখভঙ্গীটুকু।

আজকের মত এখানেই থামি। তিমি আর গ্লেসিয়ার-এর গল্প সামনের দিন। এবার এখন পর্যন্ত হওয়া গল্পের কয়েকটা ছবি দেখাই।

সিয়াট্ল-এ নামার সময় বিমানের জানালা থেকে দেখা মেঘের সমুদ্রে জেগে থাকা পাহাড়-চূড়া

সিয়াট্ল-এর স্পেস নিড্ল্

জাহাজ থেকে সিয়াট্ল

বৃষ্টি শুরু হল, তবে আমরা নরওয়েজিয়ান পার্ল জাহাজের গার্ডেন কাফেতে জমিয়ে বসার পর

এইরকম যে কত খাওয়া হল!

জাহাজ থেকে শেষবারের মত সিয়াট্ল দেখে নেয়া

অনেকগুলি কাফের একটির এক কোনা

দুই তলা-জোড়া একটি কাফের উপরের তলার দেয়ালের ম্যুরাল-এর অংশ

বারো তলায় জলকেলির ব্যবস্থা

এই গ্যাজিবো থেকেই জাহাজ-ছাড়ার উৎসবের গান-বাজনা পরিচালনা করা হয়েছিল।

ক্যানভাসের চাঁদোয়ার নীচে খোলা হাওয়ায় খাবার খেতে খেতে প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা।

নিজেদের ঘরে চা বানিয়েছি। নিজের হাতে কিছু বানানোর সুযোগ ছাড়া যায়!

নিজেদের ঘর/বারান্দা থেকে

ঢেউ ভাঙ্গছে

জাহাজ এগিয়ে চলেছে

ক্রুজ-এর স্বপ্ন তথা শুরুর শুরু কতবার যে দুজনে গল্প করেছি একবার জাহাজে চেপে ঘুরতে যেতে হবে। কোথায় যাবো জানিনা, কিন্তু যেতে হবে। গিন্নী বলে চার রাত-এর ট্রিপ নিলেই যথেষ্ট। আমি বলি পাঁচ রাতের কমে যাওয়া নেই। আন্তর্জাল-এ রকমারী ক্রুজ-লাইন-এর বিজ্ঞাপন, কত যে ‘ডিল’ আসে-যায়। কিছুতেই আর কোন ‘ডিল’ ধরা হয়ে ওঠে না। হঠাৎ করেই হয়ে…