প্রস্তর পাহাড় আর অ্যাাকোয়ারিয়াম

কোথায় যাব সেটা বড় কথা ছিল না।

বড় কথা ছিল যেতে হবে। বেরিয়ে পড়তে হবে। দূরে নয়, কাছে। দূরে ঘুরে আসার সময় নেই। সময় বড়ই জ্বালাতুনে। কিছুতেই তাকে বাগে পাওয়া যায় না। আবার সময় মধুরও বটে। কতকাল বাদে সময় পেয়েছে মেয়ে, মা-বাবার সাথে বেড়াতে যাওয়ার। হোক না দু-দিনের। দু দিন কি কম দিন! কিন্তু সেই পুরান প্রশ্ন ঘুরে ঘুরে আসে, যাই কোথায়?

এক আড্ডায় তরুণ বন্ধু জিজ্ঞেস করল,
– স্টোন মাউন্টেন গিয়েছ?
– হ্যাঁ, একবার রাস্তা থেকে দেখেছিলাম।
– তা হ’লে আর কি, হীথ্রো বিমানবন্দরে নেমে আবার প্লেনে উঠে পড়ে বলে দাও ইংলন্ড ঘুরে এসেছি।
– হুম্।

আড্ডা থেকে বাড়ি ফিরে গিন্নীর সাথে কথা বলে পরিকল্পনা পাকা করা হয়ে গেল। প্রথম দিন ঘন্টা চারেক গাড়ি চালিয়ে আমরা চলে যাব পাশের রাজ্য জর্জিয়ার স্টোন মাউন্টেন-এর কোলে এক রিসর্টে। তারপর সারাদিন ঐ প্রস্তর পাহাড়ে ঘোরা, রাতে লেজার-প্রদর্শনী। পরদিন ভোরে জমিয়ে প্রাতরাশ, মূল্য যার নৈশাবাসে থাকার দামের মধ্যেই ধরে নেওয়া আছে। দ্বিতীয় দিন দুপুরে জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়াম-এর কাছাকাছি একটি হোটেলে উঠে যাওয়া যাবে। বিকেল থেকে রাত অ্যাকোয়ারিয়াম-এ ঘোরাঘুরির শেষে হোটেলে ফিরে আসা। পরদিন সকালে গোকুল মিষ্টান্নভান্ডারে জমিয়ে প্রাতরাশ সেরে মন চল নিজ নিকেতন।

সাধারণতঃ কোথাও যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করে যাই। এবারে সময়াভাবে সেই সুযোগ আসে নি। গিয়ে পড়ে বুঝলাম, বিশেষ করে লেজার প্রদর্শনীটি দেখার পর, এই ন্যাড়ামুন্ডি পাহাড়টি হচ্ছে আমারিকার গৃহযুদ্ধে পরাজিত দক্ষিণের জনমানসে আমরা-কিন্তু-তখনও-ভালই-চেয়েছিলাম-এখনও-ভালই-চাই মূলক বেদনার স্মৃতিসৌধ, চাইনি-তাই-জিতিনির রোমান্টিক স্বপ্নবিহার।

পৃথিবীর জঠর থেকে নানা ফাঁক-ফোকর দিয়ে উঠে আসে গলিত, অর্ধগলিত পাথর আর গ্যাস-এর মিশ্রণ – ম্যাগনা। সেই ম্যাগনা ঠান্ডা হয়ে জমে তৈরী করতে পারে আগ্নেয় শিলা। কোথাও কোথাও এই আগ্নেয় শিলা তৈরী করে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত কোন পাহাড়। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-জল সেই পাহাড়ের গায়ের নরম আস্তর খসিয়ে চলে যুগের পর যুগ। একসময় দেখে মনে হয় যেন কেবলমাত্র পাথর দিয়েই তৈরী এক ন্যাড়া মাথা পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। একাকী, নিঃসঙ্গ। তা বলে প্রাণহীন নয়। আর, মানুষের নজর পড়লে সেখানে ঘটতে পারে কত কিছু। তাকে ঘিরে রমরমিয়ে চলতে পারে কোন বিনোদন-উদ্যান। তার গায়ে গড়ে উঠতে পারে কোন সৌধ, খোদাই করা থাকতে পারে পৃথিবীর বৃহত্তম হাল্কা-উচ্চাবচ (bas-relief) ভাস্কর্য। তিনজন লোকের মূর্তি। কারা সে তিনজন? পরে আসছি সে পরিচয়ে।

কাজের জায়গা থেকে দু’টি দিন-এর ছুটি চেয়ে নিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারের সকালে পাশের রাজ্য জর্জিয়ার উদ্দেশে ছুটল আমাদের গাড়ি। একবার ভাবা গেছিল যে, চাটানুগার রুবি জলপ্রপাতটি ঘুরে যাওয়া যেতে পারে, পথেই পড়ে প্রায়। মেঘলা মানুষের চমৎকার ভ্রমণ বৃত্তান্তটি পরে অবধি ইচ্ছাটি বড়ই প্রবল হয়ে আছে কিনা! কন্যা রাজী ছিল। কিন্তু আমরা বুড়োবুড়ি শেষে আর অতিরিক্ত চাপ নিতে ইচ্ছুক রইলাম না। অতএব সরাসরি আটলান্টা এভারগ্রীন ম্যারিয়ট কনফারেন্স রিসর্টে, হ্রদের ধারে তিনতলার ঘরে। জামা-কাপড়-কম্পিউটার ইত্যাদির ছোট ছোট যার-যার-তার-তার ব্যাগগুলিকে ঘরে রেখে বেড়িয়ে পড়লাম পাহাড়ের অভিমুখে। অনেকদিন বাদে সঙ্গী হল প্রিয় নিকন ডি৩০০।

পাহাড়টিকে ঘিরে যে বিনোদন-উদ্যান, টিকিটের পর্ব মিটিয়ে ঢোকা গেল সেখানে। যাত্রা শুরুর সে চৌমাথার নাম ক্রসরোড। প্রথমেই সারা হল দুপুরের ভোজন। ক্রসরোডে, বার্বিকিউ বেস ক্যাম্প নামের ভোজনালয়ে। এরপর আমরা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম সামিট স্কাই রাইড-এর পাহাড়তলির ইস্টিশানে। দুটি গাড়ি দড়িতে ঝুলে ঝুলে উপর-নীচে যাতায়াত করে – একটি নীল গাড়ি, একটি লাল। আমাদের ঠাঁই হল নীল গাড়িতে। সিধে উপরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল কনফেডারেট স্মৃতির খোদাইওয়ালা ন্যাড়ামুন্ডি পাহাড়টির মাথায়। পাহাড়ের মাথায় কোন বুদ্ধমূর্তি ছিল না। আমিও সঙ্গে করে নিয়ে যাইনি। তাই যারা বুদ্ধমূর্তির ছবি না দেখে ভাববেন আমি পাহাড়ে চড়িনি তাদের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য পাহাড়ের মাথায় ইউ এস কোস্ট এন্ড জিওডেটিক সার্ভের যে সীলটি আছে তার ফোটো তুলে নিলাম। যদি বলেন যে এটি আসলে রিসর্টে আমাদের ঘরের দেয়ালে যে ছবিটি আছে সেখান থেকে নেওয়া, তবে জানিয়ে রাখি, দেয়ালের ঐ ছবিটি আমার তোলা ছবির চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর ছিল।

(১) বার্বিকিউ বেস ক্যাম্প। প্রথম দিনের দিবাভোজ এখানে সারা হয়েছিল ।

(২) প্রস্তর পাহাড়ে হাল্কা উচ্চাবচ ভাস্কর্য ।

(৩) লাল নীল ঝোলা গাড়ি ।

(৪) প্রস্তর পাহাড়ের মাথায় ।

পাহাড়ের উপর থেকে আটলান্টা শহরের দিগন্তচিত্র (skyline) সহ চারিদিকের শোভা দেখা শেষ করে একসময় লাল গাড়ি করে নীচে নেমে এলাম। এক হাতে ক্যামেরা, এক হাতে ছাদ থেকে ঝোলা ফাঁস ধরে ভারসাম্য রাখতে রাখতে উপরে যাওয়া, আবার নেমে আসা – সে দুঃসাহসী দুর্গম যাত্রার বিবরণ আর নাই বা দিলাম। পাহাড় চড়ার পালা শেষ করে ফিরে এলাম বার্বিকিউ ভোজনালয়ের পাশের এক কাঁচের শিল্পসামগ্রী বানানোর দোকানে। সেখানে তখন আগে থাকতে ঘোষিত সময়সূচী অনুসারে কাঁচের একটা পিন্ড থেকে ফাঁপা সুদৃশ্য কাঁচ পাত্র বানানোর প্রদর্শনী চলছে।

(৫) কাঁচ পাত্র বানানো। চিমটে দিয়ে গলন্ত কাঁচের পিন্ডে নক্সা করা হচ্ছে।

(৬) কাঁচ পাত্র বানানো। ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে তারপর সেই গোলককে টেবিলে চেপে চেপে ভিন্ন আকার দেওয়া হচ্ছে।

খানিকক্ষণ সেই কেরামতি দেখে ছুটলাম হাঁস-গাড়ির গুমটির দিকে। টিকিট আগেই কাটা ছিল। এখন গাড়ির অপেক্ষা। একসময় এল আমাদের পালা। সব কটি আসন ভরে নিয়ে হাঁস-গাড়ি রওনা দিল। প্রস্তর পাহাড়ের পার্কের রাস্তা দিয়ে হাল্কা চালে চলতে চলতে এক সময় হাঁস-গাড়ি সটান গিয়ে নদীর মত দেখতে হ্রদের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এখন সে নৌকা। মনে আছে ত সেই কবিতাটা –
হাঁস-গাড়ি গাড়ি নয়, নৌকা সে আসলে।
দেখে এসো চেপে তাতে বিশ্বাস না হ’লে ।
(বিস্তারিত জানতে)

মাঝমাঝি জলে গিয়ে গাড়ির চালক দিদি, না না, নৌকার মাঝি দিদি উভচর যানটিকে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বৃত্তাকার পথে চালু রেখে দিলেন। তারপর নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে প্রায় আমাদের মুখোমুখী, একটু তেরছা করে বসে জুড়ে দিলেন তুমুল গল্প। আর এক এক করে ডেকে ডেকে সব বয়সী বাচ্চাদের তার ফাঁকা আসনে বসিয়ে ঘোষণা দিতে থাকলেন এখন আমাদের চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ক্যাপ্টেন অমুক। ক্যাপ্টেনদের যে সে কি গর্বভরে যান চালানো আর অভিজ্ঞ মতামত দেওয়া! একজন ত জানালেন তিনি নিজেকে অত্যন্ত দক্ষ চালক মনে করেন কারণ এইরকম অভিজ্ঞতা আগেও তার বহু বার হয়েছে।

হ্রদের এক তীরে দেখা গেল ৭৩২টি ঘন্টা বিশিষ্ট বিশাল বাদ্যযন্ত্রসৌধ, বিখ্যাত আটলান্টা ক্যারিলন। এবং, একটি ধৈর্য্যশীল বক। চক্কর খাওয়ার সময় আমাদের জ্ঞানলাভ হল যে হ্রদের তীরের ‘দি কমন্স’ ভোজনালয়টি এক অতি বিশিষ্ট জায়গা, কোন কোন দিকপাল যেন সেখানে খেয়ে গেছেন। ঐখানেই আমরা নৈশভোজের জন্য আসন ধরে রাখার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছি। এখন সেটির খ্যাতির বহর শুনে আমরা তিনজন চুপি চুপি সকৌতুকে চোখাচুখি করলাম, ভোজনালয়ের ভালই বিজ্ঞাপন চলছে। এবার খাবারটা ভাল লাগলেই হয়। একসময় চক্কর শেষ করে সেই ছিল-গাড়ি-হয়ে-গেল-নৌকা আবার চার চাকায় ভর করে ডাঙ্গায় উঠে গাড়ি হয়ে গেল।

(৭) ক্যারিলন, প্রস্তর পাহাড় হ্রদের ধারে বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র

(৮) হ্রদের তীরে আমাদের নৈশভোজের জায়গা

(৯) হ্রদের তীরে গাছের ভাস্কর্য

(১০) একলা বকের নজরদারী

হাঁস-গাড়ি পর্ব শেষে রিসর্ট ঘুরে এসে ভোজনালয়টিতে রাতের খাওয়া সেরে চলে এলাম পাহাড়ের কোলের এক মাঠে যেখানে লেজার-প্রদর্শনী হবে। চলে ত এলাম, কিন্তু গাড়ি রাখব কোথায়! বিশাল পার্কিং লট পুরোই ভর্তি। এক জায়গায় দেখলাম রাস্তার পাশে পার্কিং-এর এলাকার বাইরের পাথুরে জমিতে কিছু গাড়ি জায়গা করে নিয়েছে। মেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। তাকে বললাম সেও ঐখানেই গাড়ি নিয়ে চলুক। রাস্তার ধার টপকে গাড়ি নিতে হবে। লেজার-শো-এর জন্য চারিদিকে সমস্ত আলো নিভিয়ে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার করা আছে। গাড়ির সামনের চাকারা রাস্তা ছেড়ে পাথুরে জমির দিকে যেতেই বিকট ঘটাং আওয়াজ করে গাড়ি আটকে গেল।

এই জায়গাটায় সামনের জমি খানিকটা নীচে, অন্ধকারে বোঝা যায়নি। দিনের আলোয় আশে পাশে যারা গাড়ি রেখেছিল তারা এই কারণেই এই জায়গাটা ছেড়ে রেখেছিল। এখন আমাদের গাড়ি রাস্তার ধারের ইঁট কি পাথরের ঘের-এর উপর গাড়ির মেঝের ভর চাপিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। তিনজনে নেমে এলাম গাড়ি থেকে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম অবস্থা। ড্রাইভার বদল হল। মা আর মেয়ে নীচে দাঁড়িয়ে প্রবল উৎকন্ঠা নিয়ে। স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরে একটু একটু করে গ্যাসের চাপ বাড়াতে থাকলাম। মেঝে ঘষে ঘষে এগিয়ে একসময় গাড়ি সামনের চাকার নীচে অবলম্বন পেল। এগিয়ে পাথুরে জমিতে গিয়ে দাঁড়াল। সামনে কয়েক গাড়ি দূরত্বের পরে খাদ। এদিকে চাকার নীচের জমি ঐ জায়গায় ভয়ানকভাবে নানা তলে বিভক্ত। ভয় ধরানো পরিস্থিতি। এতক্ষণে অবশ্য একটা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল, অন্ধকারটা এখন আর অত অন্ধকার লাগছে না। আমাদের চোখ সয়ে গেছে। মা আর মেয়ে পরস্পরে খানিকটা তফাৎ রেখে খাদের কাছাকাছি দুই সীমানা-চিহ্ন হয়ে দাঁড়াল। আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে পিছিয়ে গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে করে দাঁড় করালাম। প্রদর্শনী শেষে সামনের বড় গাড়িটা সরে গেলে এই ফাঁদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে।

ডি৩০০-কে ব্যাগ থেকে বার করে গলায় ঝুলিয়ে তিনজনে পা চালালাম গন্ত্যব্যর দিকে। আলোর কারসাজি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঠাসা ভীড়। তার মধ্যেই একটু জায়গা দেখে মা-মেয়ে এগিয়ে গেল। বসে পড়ল মাঠে। আমি মাঠের ধারের একটা প্রায় কোমর সমান পাথরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। পাথরটা চওড়া। তার উপরে বসে ছিলেন একজন। সে লোকের পা আমার দিকে ছড়ানো। মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে তার জুতো থেকে মাঝে মাঝে উঠে আসছে – নাঃ, আর মনে করতে চাই না। এই পাহাড়, পাহড়ের বিভিন্ন আকর্ষণগুলি, লেজার প্রদর্শনী, এই সমস্তই চলছে ব্যক্তি মালিকানায়। অন্য সময় কি হয় জানি না, স্কুল-কলেজের গরমের ছুটির সময় মনে হয় ভালই আয় হচ্ছে মালিকদের।

টমাস জে স্টোনওয়াল জ্যাকসন, রবার্ট ই লী এবং জেফারসন ডেভিস। কনফেডারেটদের হয়ে গৃহযুদ্ধটা প্রায় জিতে নেওয়া দুই জেনারেল আর কনফেডারেটদের প্রেসিডেন্ট। ঘোড়ার পিঠে এই তিন চরিত্রর ছবিই পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা। সেই ছবিকে প্রেক্ষাপটে রেখে ইতিহাস-গল্প-গান-বাদ্য-ছবি-আলোকচিত্র-চলচ্চিত্র-তারাবাজি সহ বিপুল মাপের লেজার আলোর খেলা। কনফেডারেট বাহিনীর এই তিন মহাপ্রভাবশালীকে যথাসাধ্য জীবন্ত ও প্রাসঙ্গিক করে তোলা হল। তবে জাতীয় সঙ্গীত-এর মধ্য দিয়ে প্রদর্শনী শেষ হল গৃহযুদ্ধ উত্তর আমেরিকার সমন্বয়ী রাজনীতি আর বর্ণবাদবিহীন সমাজ-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে। জৌলুশ, কৃৎকৌশল, নান্দনিকতা ভালো লেগেছে। কিন্তু আলো-আঁধারীর মায়া-কুয়াশায় ঢেকে রাখা হল কুৎসিত ইতিহাস। দাসপ্রথা চালু রাখার মত এক চরম ঘৃণ্য, নৃশংস কাজকে বহাল রাখার জন্য এই লোকগুলি বীভৎস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লড়ে গিয়েছিল। এই অনুষ্ঠান থেকে অন্ততঃ আমার কাছে সে ইতিহাস ধরা পড়লনা। আশা করি উপস্থিত বাচ্চাগুলির ইতিহাস জ্ঞান এই প্রদর্শনীর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে না।

(১১) লেজার প্রদর্শনী

(১২) লেজার প্রদর্শনী

(১৩) লেজার প্রদর্শনী

(১৪) লেজার প্রদর্শনী

(১৫) লেজার প্রদর্শনী

(১৬) লেজার প্রদর্শনী। ক্যানভাস থেকে ছবি আলাদা করে নেওয়ার কাজ আমি ফটোশপে করি। এরা দেখছি, করেই রেখেছে।

(১৭) লেজার প্রদর্শনী

(১৮) লেজার প্রদর্শনী। ডেভিল ওয়েন্ট ডাউন টু জর্জিয়া গানের সাথে।

(১৯) লেজার প্রদর্শনী। মার্টিন লুথার কিং। ক্যামেরা বাগাতে দেরী হয়ে গিয়েছিল।

(২০) লেজার প্রদর্শনী। জে এফ কে।

(২১) লেজার প্রদর্শনী। রোজা পার্কস।

(২২) লেজার প্রদর্শনী

(২৩) লেজার প্রদর্শনী। তারাবাজি।

(২৪) লেজার প্রদর্শনী। পতাকার সম্মান।

(২৫) লেজার প্রদর্শনী, তারাবাজি।

(২৬) লেজার প্রদর্শনী। তারাবাজি।

(২৭) লেজার প্রদর্শনী। হাল্কা উচ্চাবচ ভাস্কর্যকতে অনেকটা গভীরতা যোগ করা হয়েছে।

লেজার প্রদর্শনী শেষে প্রায় সব গাড়ি একসাথে গৃহ-অভিমুখী। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর। এদিকে আমাদের গাড়ির সামনের বড় গাড়িটার আরোহীদের আর দেখা নেই। একসময় এলাকা ফাঁকা হতে শুরু করল। আর কবে আসবে তারা! অস্বস্তি হচ্ছে। এই সময় ঐ গাড়ির পাশের ছোট গাড়িটির লোকেরা এসে গেল। আর অপেক্ষা না করে আমরাও গিয়ে উঠে পড়লাম আমাদের গাড়িতে। ছোট গাড়িটি সরে যাওয়ার পর সেই ফাঁক দিয়ে একটু একটু করে আমাদের গাড়ি বার করে নিয়ে উঠে এলাম রাস্তায়। এতক্ষণে ঐ বড় গাড়ির আরোহীরা এসে গাড়িতে চেপেছে। কিন্তু ভাব ভঙ্গীতে বোধ হলনা এখনো তাদের যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে বলে। থাক তারা যতক্ষণ খুশী, আমরা এবার আজ রাতের মত পালা শেষ করি। এ রাত মনে থাকবে বহুকাল।

পরদিন গুছিয়ে প্রাতরাশ করা হল। তারপর নুতন হোটেল, অ্যাকোয়ারিয়াম। ডলফিন-দের খেলা। ত্রিমাত্রিক ছবির সাথে চোখে মুখে জলের ছিটে, পায়ে হাওয়ার ধাক্কা ইত্যাদির সাহায্যে চতুর্মাত্রিক শো। চিক-ফিলা নামের দোকানে মুরগীর মাংসে নৈশাহার, হোটেলের ঘরে ফিরে ক্যামেরা থেকে ছবি নামানো, নিশ্চিন্ত ঘুম। পরদিন মিষ্টির দোকানে লুচি-তরকারী-ধোসা-হালুয়া-রকমারী সন্দেশ – খাওয়াই খাওয়া। মেঘ-বৃষ্টি মেশামেশি বাড়ি ফেরা। তারপর – আর কি! প্রতীক্ষা, পরের বেড়ানোর জন্য!

(২৮) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। দলে দলে ঘুরে যায় তারা, অবিরাম।

(২৯) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী সাগর কুসুম।

(৩০) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী সাগর কুসুম।

(৩১) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। দৈত্যাকৃতি জাপানী মাকড়সা কাঁকড়া।

(৩২) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। বেলুগা তিমিরা।

(৩৩) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। নক্রসিংহ (সী লায়ন)

(৩৪) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। চলে এসো কে লড়বে আমার সাথে।

(৩৫) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। পাথরের আড়ালে লুকিয়ে এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অক্টোপাসটি মুখ খুলছিল আর বন্ধ করছিল। সম্ভবতঃ তার গিল-এর মধ্য দিয়ে জল পাঠিয়ে শ্বাস নিচ্ছিল।

(৩৬) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। এই মাছটি মনে হয় পাথরে ভর দিয়ে ঝিমাচ্ছিল।

(৩৭) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। আগাছার মত দেখতে সমুদ্র ড্রাগন (উয়িডী সী ড্রাগন)।

(৩৮) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। আগাছার মত দেখতে সমুদ্র ড্রাগন (উয়িডী সী ড্রাগন)।

(৩৯) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। পেঙ্গুইন। এই লোকগুলোকে কেউ সরিয়ে নেবে কি? আমি একটু নিরিবিলি চাই!

(৪০) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। পেঙ্গুইন। দোস্তি।

(৪১) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। পেঙ্গুইন। আমি তোমায় চুলকে দিই, তুমি আমায়!

(৪২) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। ক্ষুরের মত দেখতে রেজর মাছ।

(৪৩) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। লেগুন জেলিফিশ।

(৪৪) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। লম্বা কর্ষিকার প্রবল বিষধর বক্স জেলিফিশ।

(৪৫) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। কামানের গোলা। ক্যাননবল জেলিফিশ।

(৪৬) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। বেঁটে কাট্ল ফিশ।

(৪৭) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। সিংহ মাছ, লায়ন ফিশ।

(৪৮) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। সিংহ মাছ।

(৪৯) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। এই মাছটির নাম জানা হয়নি!

(৫০) জর্জিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে। কার্প গোত্রের নীল মাথা মাছ। এদের মাথার উপর আবার মুক্তোর মত দানা আছে।

কোথায় যাব সেটা বড় কথা ছিল না। বড় কথা ছিল যেতে হবে। বেরিয়ে পড়তে হবে। দূরে নয়, কাছে। দূরে ঘুরে আসার সময় নেই। সময় বড়ই জ্বালাতুনে। কিছুতেই তাকে বাগে পাওয়া যায় না। আবার সময় মধুরও বটে। কতকাল বাদে সময় পেয়েছে মেয়ে, মা-বাবার সাথে বেড়াতে যাওয়ার। হোক না দু-দিনের। দু দিন কি কম দিন! কিন্তু সেই…