শূণ্য কাফে
গল্পঃ শূণ্য কাফে
লেখকঃ নাগিব মাহফুজ
The Empty Cafe
By Nagib Mahfuj
Bengali translation by Amitabha Chakrabarti
মোহাম্মেদ রাশিদি বললেন, দুঃখে আর আবেগে গলা কেঁপে যাচ্ছিল তাঁর, “পরম ক্ষমাশীল আল্লার রহমতে, তোমার মহান মালিকের উদ্দেশে, প্রিয় জাহিয়া, জীবনসঙ্গিনী আমার, আল্লার রহমতেই অর্পণ করলাম তোমায়।”
বালিশে ডান হাতের ভর রেখে, বিছানায় শোয়ানো শরীরটির উপর কাত হয়ে ঝুঁকে, ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছিলেন তিনি, যতক্ষণ না বাড়ির পুরনো কাজের মহিলাটি এসে তাঁকে সামলে নিল, তাঁর হাতে আস্তে আস্তে চাপড় দিয়ে তাঁর স্ত্রীর নিথর হয়ে শুয়ে থাকা শরীরের থেকে সরিয়ে তাঁকে বসার ঘরে নিয়ে গেল, যেখানে তিনি গভীর শ্বাস ফেলে একটি আরামকেদারায় গা এলিয়ে ডুবে গেলেন। পা-দুটো ছড়িয়ে দিলেন একটু, গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বিড়বিড় করলেন, “একা হয়ে গেলাম আমি, কেউ আর সাথী রইলনা। কেন আমায় তুমি ছেড়ে গেলে জাহিয়া? চল্লিশ বছর একসাথে কাটিয়ে এখন আমার আগে আগে কেন তুমি চলে গেলে?”
কাজের মেয়েটি তাকে যে সব কথা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিল খুবই গতানুগতিক সে সব, কিন্তু কি বা আর করার আছে, নব্বইয়ের কোঠার কোন বৃদ্ধ লোককে এইভাবে কাঁদতে দেখলে খুব কষ্ট লাগে। তার তোবড়ানো গাল আর এবড়খেবড়ো নাক চোখের জলে ভিজে চকচক করছিল। নিজের কান্না আটকাতেই মেয়েটি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। চোখ বন্ধ করলেন তিনি, চোখের পাতার দু-একটা বাদে সমস্ত চুল বহুকাল হয় ঝরে গেছে। “চল্লিশ সাল আগে আমি ঘরে এনেছিলাম তোমায়,” বলে চললেন তিনি, “তখনো কুড়ির ঘর পার হওনি তুমি। আমি নিজে হাতে তোমায় লেখা-পড়া শিখিয়েছি, এবং বয়সের এতটা তফাৎ সত্ত্বেও কি সুখী ছিলাম আমরা। সকলের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার সেরা সাথী, বড় দয়ালু মানুষ ছিলে তুমি – তাই আমি পরওয়ারদেগারের দয়ার কাছেই তোমায় নিবেদন করলাম।”
বয়স অনুপাতে চমৎকার স্বাস্থ্যের অধিকারী তিনি, লম্বা, একহারা চেহারা। মুখের চামড়া ভাঁজ আর বলিরেখায় ঢাকা পড়ে গেছে, হাড়গুলি যদিও তীক্ষ্ণভাবে প্রকট হয়ে আছে, করোটির মত দেখায় প্রায়। চোখের অনেক গভীরে ঝাপসা পর্দার পিছনে যে দৃষ্টি অদৃশ্য অপেক্ষায় থাকে সেখানে বর্তমানের এই জগতের কোন ছায়া পড়ে না।
অন্ত্যেষ্টিতে অনেক লোক এসেছিল, তাদের একজনও তার বন্ধু বা পরিচিত কেউ ছিল না। তারা সমবেদনা জানাতে এসেছিল তার ছেলের প্রতি বা বিদেশের এক দূতাবাসে কর্মরত তার মেয়ের জামাইয়ের সম্মানে। তার নিজের দিক থেকে একজন বন্ধুও আর বেঁচে নেই। অচেনা মুখগুলিকে অভ্যর্থনা করে গেছেন তিনি আর নিজের মনে প্রশ্ন করেছেন কোথায় গেল সেই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষকতার সাথে যুক্ত মানুষগুলো। মুস্তফা কামিল আর মোহাম্মেদ ফরিদের সময়ের সেই আসল রাজনীতিবিদরাই বা সব গেল কোথায়?
মাঝ রাত বরাবর অন্ত্যেষ্টির সব কাজ মিটে গেলে পর তার ছেলে সবির তাকে জিজ্ঞাসা করল, “এখন কি করতে চাও, আব্বা?”
তার ছেলের স্ত্রী বলল, “আপনার পক্ষে একা এইখানে থাকা সম্ভব নয়।”
বৃদ্ধ সবার কথাই বুঝতে পারছেন। ক্ষোভ জানালেন তিনি, “জাহিয়া আমার সব কিছু ছিল। আমার মন, আমার হাত – সমস্তই ছিল ও।”
“আমার বাড়ি ত তোমারই বাড়ি,” বলল সাবির, “আর তুমি যদি আমাদের সাথে থাকতে আসো, বাড়িটা তোমার আশীর্বাদ পেয়ে ধন্য হবে। তোমার দেখাশনা করার জন্য তোমার কাজের মেয়ে মুবারকাও আসবে তোমার সাথে।”
এটা ঠিক যে তিনি একা নিজে নিজে এই বাড়িতে থাকতে পারবেন না। তবুও, তার ছেলে এবং ছেলের বঊ যে মমতা দেখাচ্ছে সেটা মেনে নিয়েও তার মনে হল যে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে নিজের স্বাধীনতা আর কর্তৃত্বের অনেকটাই হারিয়ে ফেলবেন তিনি। কিন্তু কিই বা করবার আছে? যৌবনে প্রথম পৌরুষের সেই দিনগুলোয় তিনি একজন শক্তপোক্ত মানুষ ছিলেন, এবং এখনো তিনি তার মর্যাদাপূর্ণ অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছেন। কত কত প্রজন্মের শিক্ষক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের কাজ শিখিয়েছেন তিনি – কিন্তু এখন কোনটা করণীয়?
বিতৃষ্ণ মনে তিনি চোখের সামনে বাড়িটার শেষ হয়ে যাওয়া দেখলেন। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেতে দেখলেন সেটাকে, যেমন ভাবে দেখেছেন তার স্ত্রীর মৃত্যু, তার খাট-বিছানা, বইয়ের আলমারি (যে সব বই আর পাতা উল্টেও দেখেন না, সেগুলোই রয়েছে গাদা করে) হাবিজাবি টুকিটাকি, কিছু ছবি – পরিবার পরিজন আর সাহিত্য, রাজনীতি বা বিনোদন দুনিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের, যেমন মুস্তফা কামিল, মোহাম্মেদ ফরিদ, আল-মুওয়াইলহি, হাফিজ ইব্রাহিম, এবং আব্দ আল-হায় হেল্মি।
বাড়ি ছেড়ে ছেলের গাড়ি চড়ে হেলিওপোলিস চলে গেলেন তিনি। তার থাকার জন্য একটা শোয়ার ঘর সাজিয়ে রাখা ছিল। কাজের মেয়ে মুবারকা হাজির ছিল তার সেবাযত্ন করা জন্য। “তুমি ডাকলেই চলে আসব আমরা,” ছেলে বলল তাকে।
মুনিরা, সাবিরের স্ত্রী, সাদর হাসিতে অভ্যর্থনা জানাল তাকে। সবাই তাকে আদর করেই ডেকে নিয়েছে, কিন্তু তার পরেও সব কিছু ছাপিয়ে একটাই ভাবনা তার মনকে আচ্ছন্ন করে রাখল – এটা তার নিজের বাড়ি নয়। একটা আরামকেদারায় বসলেন তিনি, মুনিরার সাথে প্রায় বিব্রত লজ্জাকুল দৃষ্টি বিনিময় করলেন। শুধু তার কন্যা সামিরা যদি এই সময় মিশরে থাকত। ওর বাড়িতে তিনি তুলনায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। দরজার গোড়ায় টুটুকে দেখা গেল। সে একবার তার বাবার দিকে, একবার তার মায়ের দিকে তাকাল। তার পর দৌড়ে এসে বাবার পা জড়িয়ে ঝুলতে রইল। দাদুকে সালাম দিল সে, এবং বৃদ্ধ তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর বললেন, “এই যে, টুটু, এদিকে এসো।”
এর আগে মাত্র দু-একবারই টুটু তার বাবার সাথে দাদুকে দেখতে গিয়েছে। বৃদ্ধ নাতিকে ভালবাসতেন খুব। এবং যখনই সম্ভব হত, তার সাথে খেলার সুযোগ ছাড়তেন না। কিন্তু টুটুর কাছে মজা মানে ছিল মারকুটেপনা। যারা ওরা সাথে খেলতে আসত, তাদের উপর যখন তখন লাফিয়ে পড়ত, তাদের নাক চোখ খিমচে দেয়ার ভয় দেখাত। খুব তাড়াতাড়িই বৃদ্ধ তার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতেন, যতটা সম্ভব দূর থেকে ভালোবাসতে চাইতেন।
দাদুর মাথার লম্বা ফেজটুপির দিকে আঙ্গুল তুলে সে বলল, “তোমার মাথা!”
সে বোঝাতে চাইল যে দাদুর উচিত ফেজটুপিটা খুলে ফেলা যাতে সে বৃদ্ধের আয়তাকার, কমলা রঙের, গড়ানে টাকটি দেখতে পায়, কারণ সেই প্রথম যখন সে ওটা দেখেছিল তখন থেকেই ওটা তার আকর্ষণ আর কৌতুহলের বিষয় হয়ে রয়েছে। যখন তার ইচ্ছা পূর্ণ হল না, তখন সে তার দাদুর বলিরেখা ভরা মুখ আর গর্ত্তওয়ালা নাকের দিকে নির্দেশ করতে রইল। এবং ওর বাবার ওকে চুপ করতে বলা সত্ত্বেও দাদুকে প্রশ্নে প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। বৃদ্ধ নিজেকে বোঝালেন যে আদরের নাতিটি তাকে না জ্বালিয়ে ছাড়বে না এবং তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষার উপায় খুঁজে পাওয়া দরকার। কিন্তু জাহিয়া কোথায়? ঘড়ি, মাছিমারা কাঠি, আর তার সিগারেট – বাচ্চাটার ছোঁকছোঁক করা হাতের নাগাল থেকে কি করে তাঁর এইসব জিনিষ সরিয়ে রাখবেন তিনি? টুটু চাইছিল দাদুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেই তার ইচ্ছেগুলো পূর্ণ করে নেয়। কিন্তু তার বাবা তাকে শক্ত করে ধরে রেখে ওর ধাইকে ডেকে নিল। সে এসে চিৎকার করে প্রতিবাদে করতে থাকা টুটুকে তুলে নিয়ে চলে গেল।
“সন্ধ্যায় আমার কাজ শেষ হয়ে গেলে,” বলল সাবির, “মুনিরা আর আমি ক্লাবে যাই, তুমিও আমাদের সাথে চল না কেন?”
“আমায় নিয়ে কিচ্ছু চিন্তা কোর না। যেমন চলছে সব, সেভাবেই চলুক।”
সাবির আর মুনিরা চলে গেল, আর বৃদ্ধ একা হতে পেরে বাঁচলেন, এবার তিনি একটু হাঁপ ছাড়তে পারবেন। কিন্তু একলা হয়ে তিনি যা ভেবেছিলেন তার থেকে অনেক তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে গেলেন। ঘরটার দিকে উদাসীন চোখ বোলালেন তিনি, এবং একাকীত্বে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। কতদিনে তিনি এই নূতন জায়গায় ঊঠে আসা আর জাহিয়াকে ছেড়ে থাকায় অভ্যস্ত হতে পারবেন? চল্লিশ বছর ধরে জাহিয়াকে ছাড়া একটি দিনও কাটাননি তিনি, সেই যেদিন হেলমিয়াতে জাহিয়া বিয়ে হয়ে এসেছিল তার জীবনে, আর সারাফিয়া তাদের দুজনের সামনে নাচ করেছিল, সেই থেকে জাহিয়ার তত্ত্বাবধানে তাদের ঘর-বাড়ি ধূপের সুগন্ধে ছাওয়া একটা গোছানো পরিচ্ছন্নতা উপভোগ করে এসেছে। তাকে বাদ দিয়ে রমজানের আর খানা-পিনার কি অর্থ আছে?
অন্ত্যষ্টিতে তার ছাত্রদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে দেখা যায়নি। কেউ কি আর তাকে মনে করে রেখেছে?
অনেক আগে যে সব বন্ধুরা চলে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। যদিও তারা চলে গিয়েছিল, তবুও তার মনে হত যেন এই সেদিন যখন মুস্তফা কামিলের জানাজায় সবাই জড়ো হয়েছিল সেইরকম সবাইকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন।
বৃদ্ধ নিজে কোনদিন বড় রকম কোন অসুখে না ভুগলেও বেচারী স্ত্রীর ভোগান্তি লেগেই থাকত – কখনো ডেঙ্গু জ্বর, কখনো টাইফয়েড, মাঝে মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জা, শেষ পর্যন্ত মারাও গেলেন হৃদযন্ত্রের কোন এক গোলযোগে, পিছনে রেখে গেলেন তার স্বামীকে – জীবনের সাথে জড়াজড়ি করে বেঁচে থাকার জন্য, ঠিক যেমনটি সে লোক বেঁচে এসেছেন বরাবর। একটা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। মুনিরার বাড়িতে তার নিজের ঘর থেকে তাকালে একটি বিরাট মসজিদ নজরে পড়ত। কিন্তু এখানে তার বদলে তিনি দেখতে পেলেন সারি সারি বাড়ি দিয়ে ঘেরা এক আয়তাকার জমির মাঝখানে একটি বড় বাগান। গরম শুকনো হাওয়ার একটা হল্কা এসে লাগল তার চোখে মুখে। চারপাশের শান্ত নীরবতা উপভোগ করছিলেন তিনি, কিন্তু এ নৈঃশব্দ তার নিঃসঙ্গতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। বৃটিশরা যেদিন কায়রোর দখল নিয়েছিল, পথ হারিয়ে ফেলা একটা ঘোড়া হাতে এসেছিল তার। কিন্তু তার বাবা এই কাজের কি ফলাফল হতে পারে সেটা অনুমান করে তাকে পেটান লাগিয়েছিলেন এবং রাত্রিবেলা ঘোড়াটিকে কায়রো খালের ধারে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসেছিলেন। আশঙ্কা আর বিষাদে সারা শহর কাঁপছিল সেদিন।
যেখানে বসেছিলেন সেখানেই আবার ফিরে এলে চেয়ারের পায়ার কাছে একটা বিড়াল দেখতে পেলেন তিনি। ধপধপে সাদা, ঘন রোমে ঢাকা, শুধু কপালের মাঝখানটায় এক টুকরো কালো রংয়ের প্রলেপ। বিড়ালটির ধূসর চোখে বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ নজরে এল তার। জাহিয়া সব সময়ই বিড়াল ভালোবাসত খুব। বিড়ালটির হাবভাব পছন্দ হয়ে যাওয়ায় চেয়ারের পায়া ঘিরে ওটার ঘুরঘুর করা দেখতে লাগলেন তিনি। ওর পিঠে আস্তে আস্তে টোকা দিলেন আর সেটা নিজেই তার পায়ের সাথে গা ঘষে ঘষে বৃদ্ধের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলল। ওর পিঠের উপর দিয়ে হাতটা বুলিয়ে নিলেন তিনি আর সেও তার হাতের তালুর আদরের জবাব দিল। ফুলিয়ে নামিয়ে পিঠটা কেঁপে কেঁপে উঠল ওর। ওনার মনে হল এই করে বিড়ালটা ওনাকে আদর জানাল। এবার তুলনায় চওড়া হাসি ফুটে উঠল ওনার মুখে, গোড়ায় সব্জে হলুদ দাঁত দেখা গেল, আর বিড়ালটা খুশীতে পিঠটা ধনুকের মত বাঁকিয়ে তুলল। ওটাকে জায়গা দেওয়ার জন্য বাঁদিকে একটু সরে গেলেন তিনি, কিন্তু টুটুর গলা, দৌড়ে আসার জন্য কাঁপছে রীতিমত, তীব্র চিৎকারে ঘরের মধ্যে ফেটে পড়ল। “আমার বেড়াল!”
দমে গিয়ে বৃদ্ধ বললেন, “এই যে, এখানে তোমার বেড়াল,” এবং স্নেহের সাথে সেটির নাম জানতে চাইলেন।
“নার্গিস,” বেড়ালটার ঘাড়ের কাছে নড়া ধরে এক হ্যাঁচকায় তুলে নিয়ে কর্কশ ভাবে জবাব দিল ছেলেটা, আর দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল, বৃদ্ধ কাতর স্বরে বলতে রইলেন “আলতো করে ধরো … আলতো করে …।”
হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠলেন তিনি। আল্লার কসম, হচ্ছেটা কি? মনে হল কিছু একটা এসে সোজা তার কপালটায় লেগেছে। বিরক্ত হয়ে ভুরু কোঁচকালেন তিনি, আর দরজার বাইরে থেকে টুটুর হাসির আওয়াজ ভেসে এল। ওনাকে আঘাত করে যে ছোট বলটা আবার টুটুর কাছে গড়িয়ে ফেরৎ গিয়েছিল সেটা কুড়িয়ে নিচ্ছিল সে। বৃদ্ধ হাতটা তুলে চশমাটা ঠিক আছে কি না দেখে নিলেন, তারপর মুবারকাকে ডাকলেন, সে ছুটে এসে বৃদ্ধের নাতি আবার বলটা ছুড়ে মারতে পারার আগে তাকে তুলে নিয়ে চলে গেল।
“এ বিচ্ছু ছেলেটা জ্বালাতুনে এবং নিষ্ঠুরও। আহারে, বেচারা বেড়ালটা!”
বছর পাঁচেক আগে ওনার মেয়ে সামিরার টুটুর বয়সী একটি বাচ্চা মারা যায়। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্না-ভেজা চোখে মেয়েকে বলেছিলেন তিনি, “চলে যাওয়ার কথা আমার … ।” জানাজায় বসে থাকার সময় ওনার মনে হয়েছিল, সমস্ত চোখগুলো অবাক দৃষ্টিতে মনে মনে তার বয়স মাপছে, কি অদ্ভুত উল্টো কাণ্ড, এতটা বয়স পর্যন্ত বেঁচে আছেন তিনি আর তার তিন বছরের নাতিটাকে চলে যেতে হল। সেই রাতেই জাহিয়াকে বলেছিলেন তিনি, “দীর্ঘ জীবন একটা অভিশাপ।” কিন্তু কি ভালো যে মেয়েটা তার, বলেছিল তাকে, “তোমার জন্য যা যা দরকার আমরা করব আব্বু, তুমি আমাদের সবার জন্য পরম আশীর্বাদ।”
সেদিন বিকেলে একটু বেলা করে বাড়ি ফেরার পর, সাবির তার বাবাকে বলল, “যা বোঝা যাচ্ছে, তুমি আমাদের সাথে ক্লাবে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছ না। তুমি দেখ, হেলিওপোলিসের কোন কাফে তোমার পছন্দ হয় কি না। আমাদের এই বাড়ির কাছে অনেক ভালো ভালো কাফে আছে।”
কাছাকাছির কোন কাফে বেছে নেওয়াই হয়ত স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু ওনার পছন্দের জায়গা – মাট্টাটিয়া। অনেককাল ধরে এটি তার প্রিয় কাফে। গুটি গুটি পায় হেঁটে, কিন্তু শিরদাঁড়া সোজা রেখে, বাস ধরার যায়গায় এক সময় পৌঁছে গেলেন তিনি। হাতে একটা ছড়ি ছিল বটে, তবে সেটার উপর ভর দিয়ে চলেননি তিনি। লোকেরা অনেকেই বিস্ময়ের চোখে দেখছিল তাকে, প্রশস্তি মেশানো ছিল সে বিস্ময়ে।
কাফেতে ঢুকে খিলানের নীচে নিজের পছন্দের জায়গায় গিয়ে বসলেন তিনি, নিজের মনে খানিকটা ঠাট্টার সুরে গিজ্ঞাসা করলেন, “কাফেতে তেমন লোকজন দেখছি না কেন?” কাফেটা অবশ্য আসলে ফাঁকা ছিল না, সত্যি বলতে, অল্প কয়েকটা টেবিল-ই খালি ছিল। যা ছিল না – ওনার নিজের কোন বন্ধু বা পরিচিত মানুষজন। ওনার একটা অভ্যাস ছিল, পুরনো দিনের চলে যাওয়া প্রিয় বন্ধুরা যে চেয়ারগুলোয় বসত সেগুলোর দিকে তাকিয়ে একে একে তাদের মুখগুলো মনে করা – কে কি করত, কি বলত – আল মুকাত্তাম-এ বের হওয়া খবর নিয়ে, তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার ব্যাকগ্যামন-খেলা নিয়ে, এবং রাজনীতি। আল্লা এটাই ঠিক করে দিয়েছেন যে রাশিদি একজনের পর একজন, তাদের সবার জানাজার মিছিলে হেঁটে যাবেন, আর তাদের জন্য শোক পালন করবেন। একটা সময় এল, যখন মাত্র আর একজন বন্ধু বেঁচে আছে, আলি পাশা মাহরান। এই চেয়ারটাতেই বসত সে। ছোট খাটো, পাতলা চেহারা, লাঠিতে ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে হাঁটত, ফেজটুপির কানা তার ঝোপড়া সাদা ভুরু ছুঁয়ে যেত। চশমার ঘন নীলাভ কাঁচের ওপার থেকে ভঙ্গুর, প্রায় কান্না-ভেজা দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকত তার বন্ধুর দিকে, প্রশ্ন করত, “ভাবছি আমাদের মধ্যে কোনজন টিঁকে থাকবে?” তারপরেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত। সে সময় তার হাতগুলোতে বার্ধক্যের কাঁপুনি এসে গিয়েছিল যদিও বৃদ্ধের থেকে উনি বছর দুয়েকের ছোট ছিলেন।
পঁচাশি বছর বয়সে আলি পাশা মাহরান যখন মারা গেলেন সে শোক সামলাতে বৃদ্ধের অনেকদিন লেগেছিল। দুনিয়া এর পর তার কাছে শূণ্য হয়ে গিয়েছিল, এই কাফেটাও।
এখানে এই আতাবা চক ওনার স্তিমিত চোখের সামনে রোজকার মতই ঘুরে চলেছে, কিন্তু এটা এখন একটা নূতন চক। মাত্তাতিয়ার কথাই যদি ধরা যায়, মূল দোকানের কোন চিহ্ন আর অবশিষ্ট নেই, শুধু এই অবস্থানটা ছাড়া। সেই বন্ধুবৎসল গ্রীক মালিকটি-ই বা কোথায় এখন? আর সেই উপরদিকে পাকিয়ে তোলা লম্বা গোঁফওয়ালা পরিচারকটি? সেইসব শক্তপোক্ত গড়নের চেয়ারগুলো? ঝকঝকে শ্বেত পাথরের টেবিল, পালিশ করা আয়না, সেই বাফে যেটায় নরম পানীয় আর নার্ঘিল দিত – গেল কোথায় সে সমস্ত?
১৯৩০-এর শাম আল-নাসিম-এর ছুটির রাতে বৃদ্ধ অবসর নিয়েছিলেন। এজবেকিয়া থিয়েটারে একদল বন্ধুবান্ধবের সাথে গান-বাজনা আর হৈহুল্লোড়ের মাঝে সন্ধ্যেটা পার করে দিয়েছিলেন। পরের দিনটা কাটিয়েছিলেন ব্যারাজ-এ, কর্মজীবনের শেষ দিনটি উদযাপন করেছিলেন। আরবী ভাষার পরিদর্শক শেখ ইব্রাহিম জানাতি এই উপলক্ষে লেখা একটি কবিতা উপহার দিয়েছিলেন তাকে। সেই রাতে “পুরানো সেই দিনের কথা” গেয়েছিল কেউ, সেই গান শুনতে শুনতে ভেসে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ, এত ব্র্যান্ডি নিয়েছিলেন তিনি যে মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন। রাত শেষে যখন তিনি ঘুমোতে গিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন যেন বেহস্তে খেলে বেড়াচ্ছেন। ইব্রাহিম জানাতি তার কবিতায় ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন যে তার সহকর্মী যেন একশ’ বছরের লম্বা জীবন উপভোগ করেন। কাফেটা যদিও একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে আর শেখ জানাতি দপ্তরের কাজ করতে করতেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, তার ইচ্ছে বোধ হয় পূর্ণ হতেই চলেছে। পরিচারক এসেছিল ট্রে তুলে নিয়ে যেতে, কিন্তু বৃদ্ধ যে কফির পেয়ালার কথা ভুলেই গেছেন, ছুঁয়েও দেখেননি, সেটা তাকে খেয়াল করিয়ে দিয়ে মাপ চেয়ে ফিরে গেল।
বাড়ি ফিরে এসে রাশিদি দেখলেন সেটা যেন চুপ করে ঘুমিয়ে আছে, বাড়ির মালিক এখনো ক্লাব থেকে ফিরে আসেনি। বৃদ্ধ রাতে দই খান, সেটা খাবার টেবিলে রাখা আছে। অনেকটা পরিশ্রম হলেও একটু একটু করে কারও সাহায্য ছাড়াই পোষাক বদলালেন তিনি। তারপর খেতে বসে নার্গিসের কথা মনে এল তার। আহা, বেড়ালছানাটা যদি এখন খাওয়ার সময় একটু পাশে থাকত! কি ভালই না হত তা হলে! এই নিজেকে নিয়ে মেতে থাকা বাড়িটায় ওটার সাথে দোস্তি পাতিয়ে নিয়ে একটা সত্যিকারের সাহচর্য্যের ব্যবস্থা করা যেত! বাড়িতেই কোথাও আছে ওটা। দরজার দিকে একে ঝুঁকে গেলেন তিনি এবং ডাকলেন, “পুষি … পুষি …পুষি।” তারপর তিনি দরজার বাইরে গিয়ে ডাক দিলেন “নার্গিস … পুষি … পুষি।” ওনার নিজের ঘরের পাশের ঘরটার দরজার পিছন থেকে একটা মিয়াও শোনা গেল, টুটু আর তার নার্স সেই ঘরে ঘুমিয়ে আছে। একটু ভাবলেন তিনি, তারপর দরজার কাছে গিয়ে আলতো করে ঠেলে পাল্লাটা খুললেন একটু আর বেড়ালটা বের হয়ে এল, তার ফোলা ফোলা লেজটা পতাকার মত খাড়া হয়ে আছে।
খুশি হয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেলেন তিনি, বেড়ালটাও এল পিছু পিছু, কিন্তু একটা ক্রুদ্ধ চিৎকার ছিটকে এল টুটুর গলা থেকে। নিজের মনে হাসলেন তিনি, ক্ষুদে ছেলেটা ঘুমায়নি এখনও। টুটু দৌড়ে এল এবং বেড়ালটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্রভাবে সেটার ঘাড় ধরে তুলে ফেলল। দাদু তার মাথায় আস্তে আস্তে চাপড় মেরে বললেন, “আলতো করে ধরো ওকে, টুটু।”
কিন্তু বাচ্চা ছেলেটা এমন ভাবে ওর মুঠি চাপতে থাকল যে একসময় বৃদ্ধের মনে হল নার্গিসের এবার দম আটকে যাবে। “তুমি যাও, আমি ওকে তোমার বিছানায় দিয়ে আসছি,” কাতর অনুরোধ করলেন তিনি।
কিন্তু টুটু ওনার কথায় কান দিল না, ফলে বৃদ্ধ নীচু হয়ে বেড়ালটাকে টুটুর মুঠি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, “আমি ওকে খাওয়াব এখন, তারপর তোমার কাছে দিয়ে আসব।”
টুটু রাগে লাফিয়ে উঠে ওর দাদুর হাঁটুতে ঠ্যালা মারল। বৃদ্ধ নড়বড় করে কেঁপে ঊঠলেন, তারপর অনিশ্চিতভাবে পিছনদিকে পা ফেললেন এব্বং টাল খেয়ে দেয়ালে ভর দিলেন। দেয়াল ধরে সামলাতে না পারলে পড়েই যেতেন। বেড়ালটা তখনো কোলেতে ধরা, কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, নিজেকে খাড়া করতে পারছেন না। মাথাটা ঘুরছহে একটু একটু। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য তিনি পা দিয়ে শক্ত করে মাটিতে চাপ দিলেন আর ঘাড় দিয়ে দেয়ালে, কিন্তু পেরে উঠলেন না। বেড়ালটা ওনার ছড়ানো কাঁধে আশ্রয় নেওয়ার জন্য হাত বেয়ে উপরে ঊঠে এল। মাথায় অল্প ঘোরের মধ্যেও তিনি টের পেলেন হাড়ের উপর ভীষণ চাপ পড়ছে, বিপদ ঘটে যাবে। শরীরে যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল তাই সম্বল করে তিনি চিৎকার করে ডেকে ঊঠলেন, “মুবারকা!”
টুটু চেঁচামেচি করছিল এবং নূতন করে আক্রমণ করার হুমকি দিচ্ছিল। বৃদ্ধ নিজেকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন। আর কখনো এত অবসন্ন বোধ করেননি তিনি, আর একবার ডাকার মতন শক্তিটুকুও আর ছিল না। টুটু প্রস্তুত হল বেড়ালটা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সেখান থেকে ওটাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য, এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু ঘর থেকে ছুটে এসে ঘুম ঘুম চোখেই ওর ধাই ওকে ওর কোমরের কাছে ধরে ফেলল। অবশেষে মুবারকা এল, এ সমস্ত হৈ চৈ-এ ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার, এবং আতংকে আল্লার নাম নিতে নিতে মালিকের দিকে ছুটে গেল।
সে ওনাকে পিছন দিক থেকে শক্ত করে ঠেসে ধরল তারপর একটু একটু করে সোজা করে দাঁড় করাল। পুরোটা সময় যন্ত্রনায় ককাচ্ছিলেন তিনি। সোজা হওয়ার পর মূর্তির মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন তিনি আর নার্গিস মেঝেতে লাফ দিয়ে পড়ে ছুটে পালিয়ে গেল। মুবারকার হাতে ভর রেখে অতি কষ্টে বৃদ্ধ নিজের আরামকেদারায় ফিরে গেলেন। চুপ করে বেশ খানিকক্ষণ বসে রইলেন তিনি, মুবারকা বারে বারে জিজ্ঞেস করল কেমন লাগছে এখন। ওর মন শান্ত করার জন্য তিনি হাতটা তুলে নাড়লেন একটু, তারপর পা দুটো সামনে টান টান করে ছড়িয়ে দিয়ে গভীর করে শ্বাস নিতে নিতে চেয়ারের পিঠে মাথা হেলিয়ে দিলেন। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য চোখ দুটো বন্ধ করলেন।
হঠাৎ করেই একটা পুরনো স্মৃতি মনে এল তার, মরহুম কোন একজনের জন্য সকলে মিলে সেদিন অনুষ্ঠান করেছিলেন, আত্মার গভীরে সে ছবি গাঁথা হয়ে আছে ওনার। মানানসই বক্তব্য রেখে মঞ্চ থেকে নেমে এসে এক বন্ধুর পাশে বসেছিলেন তিনি। বন্ধুটি তার দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে প্রশংসাসূচক কিছু কথা বলেছিল। কিন্তু কে ছিল সেই বন্ধু, কোন জন? আঃ, খুব নিশ্চিত ছিলেন তিনি যে তার নামটা মনে করতে পারবেন। এখন এতটা বিচলিত হয়ে পড়েছেন তিনি যে মানুষটিকে মনে করতে পারছেন না কিছুতেই! বন্ধুটি এমন কিছু বলেছিল তাকে যা সহজে ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ঠিক মনে করতে পারবেন তিনি। সবাই উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিল, হাততালি দিয়েছিল। বেড়ালের মৃদু ফ্যাঁফ্যাঁস এখন রীতিমত জোরে শোনা যাচ্ছিল, সবার চোখ কান্নায় ভিজে গিয়েছে। বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। বন্ধুটি আবার তার দিকে ঝুঁকে এল এবং কিছু কথা বলল। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে সমস্ত স্মৃতিগুলো আবার মনে এনে ফেলতে পারবেন তিনি, পুরোটা।
এবং এর একটুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি।
——————-
********************************
লেখক পরিচিতিঃ
খ্যাতনামা মিশরীয় লেখক নাগিব মাহফুজের জন্ম কায়রোতে ১৯১১ সালে। তাঁর অসাধারণ সৃষ্টিকর্মের জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। আরবী ভাষাভাষী লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেলজয়ী লেখক। নাগিব মাহফুজ শতাধিক ছোটগল্প এবং ত্রিশটির মত উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কায়রো ট্রিলজি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। ২০০৬ সালে নাগিব মাহফুজ মৃত্যু বরণ করেন।
********************************
[প্রকাশ – গল্পপাঠ, জানুয়ারী ৬, ২০২২]
মোহাম্মেদ রাশিদি বললেন, দুঃখে আর আবেগে গলা কেঁপে যাচ্ছিল তাঁর, “পরম ক্ষমাশীল আল্লার রহমতে, তোমার মহান মালিকের উদ্দেশে, প্রিয় জাহিয়া, জীবনসঙ্গিনী আমার, আল্লার রহমতেই অর্পণ করলাম তোমায়।”
Recent Posts
Categories
- Blog
- Book Chapter
- featured
- অঞ্জলি
- অনুবাদ
- অনূদিত কবিতা
- অনূদিত গল্প
- আলাস্কা গ্লেসিয়ার বে
- ঈশপের গল্প
- কবিতা
- কিছুমিছু
- ক্যালিডোস্কোপ
- ক্রুজ
- গল্পপাঠ
- গুরুচন্ডালি
- ছোট গল্প
- টুকিটাকি
- দুকূল
- নীতিকথার অনুবাদ
- পাঠ প্রতিক্রিয়া
- ফটোগ্রাফি
- বইয়ের হাট
- বাছাই
- বেড়ানোর গল্প
- মৌলিক কবিতা
- রুট ৬৬ গ্রুপ পোস্ট
- রুট ৬৬ শারদীয়া ২০২০
- সচলায়তন
- স্মৃতিকথা